নিশ সাইট তৈরির সময় বড় বড় ভুল থেকে যেভাবে বাঁচবেন!

কিছুদিন আগে বেসিক নিশ সাইট অডিট নিয়ে গ্রুপে পোস্ট দিয়েছিলাম। আমি ভেবেছি ৮-১০ মানুষ হয়তো ফর্ম ফিলাপ করবেন। কিন্তু অনেক মানুষ ফর্ম ফিলাপ করে ফেলেছে।

তাই একদম প্রথম দিকে যারা করেছে তাদের অনেকের সাইটই অডিট করে মেইল করে দিয়েছি। আরও অনেকের টা বাকি আছে (আমি দুঃখিত, আদৌ শেষ করতে পারব কিনা জানিনা) । আমি হিসাব করে দেখলাম একটা সাইট বেসিক অডিট করতে (গতানুগতিক স্টেপ বাই স্টেপ অডিট না) এবং ইন্সট্রাকশন, সম্ভাব্য সমাধান, স্ক্রিনশট নিতে কম করে হলেও ৪০-৫০ মিনিট সময় লাগে।

আমি ইনশাআল্লাহ্‌, সবার সাইটই চেক করে দিতে চেষ্টা করবো । হয়তো সময় বেশি লাগতে পারে। আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

তো, এখন পর্যন্ত যেসব সাইট চেক করেছি, এদের কমন কিছু সমস্যা আছে। আমার ইচ্ছা আছে কমন সবগুলো সমস্যা নিয়েই লিখবো। তবে, এই আর্টিকেলে যেকোনো সমস্যা এড়িয়ে কিভাবে নিশ সাইট করা যায় তার একটা সহজ সাবলীল গাইড লাইন দিয়ে দিবো।

আপনি কি করছেন তা কি পুরোপুরি জানেন?

ভুল কাজ

অনেকেই দেখলাম নিজের মন মতো যা খুশি করেছে। দেখে বোঝা যায় স্টাডি না করেই কাজ করেছে। আপনি টাকা ইনভেস্ট করবেন, সময় ইনভেস্ট করবেন, শ্রম দিবেন। এগুলো সবই যদি বৃথা যায়, তাহলে লাভ কি বলেন?

আপনি হোমো স্যাপিয়েন্স (লিংকে ক্লিক করেই দেখেন 😉 ) কাজ করার আগে আপনার ধারণা/কনসেপ্ট পরিষ্কার করে নিন। প্রতিটা কাজ করার আগে আপনাকে জানতে হবে কাজটা কেন করবেন, কিভাবে করবেন।

কারও সাইটে আপনি টেবিল অব কন্টেন্টস দেখলেন। আর সেটা আপনিও ইউজ করতে চাইলেন। কিন্তু কেন করলেন? এর ফায়দা কি? অসুবিধা কি হতে পারে? যিনি করেছেন তিনি কিভাবে করেছেন, আপনি কিভাবে করলেন?

কি! মাথা ঘুরায়?

হ্যাঁ এভাবেই কাজ করতে হবে। নিজের মন মতো না। কি করছেন; কেন করছেন; কিভাবে করছেন, কেন ব্র্যান্ডেবল ডোমেইন ইউজ করবেন, না করলে কি সমস্যা? করলে কি লাভ? সবগুলো প্রশ্নের উত্তর জানা থাকতে হবে।

নিশ সাইটে লিংক বিল্ডিং এ কেমন অ্যাংকর করবেন? শুধু এক্স্যাক্ট ম্যাচ অ্যাংকর দিলে কি সমস্যা? ব্র্যান্ডেবল কেন দিতে হবে? না দিলে কি হয়? সাইট স্পিড কেন ফাস্ট হতে হবে? এসএসএল আসলে কেন দিচ্ছি? না দিলে কি হবে?

এসব প্রশ্নের সত্য এবং সঠিক উত্তর আপনার জানা আছে?

জানতে হবে বস, জানতে হবে।

পরিষ্কার ধারণা থাকা আর না থাকার মধ্যেই কেমন কাজ হবে আপনার সেটা ডিপেন্ড করে।

যেটাই করবেন, সেটা কেন করছেন; এটা আপনাকে জানতেই হবে। জানা ছাড়া কোন কাজই করবেন না। আর নিজের মনগড়া কিছুতো ভুলেও করবেন না। কাজ করলে মনে হতেই পারে যে, “এটা করলে ওটা হবে”, “ওটা না করলে মনে হয় এটা হবেনা”। এরকম প্রশ্ন মাথায় আসলে ১-২টা সিম্পল গুগল সার্চেই জানা হয়ে যাবে।

কপিক্যাট – কিওয়ার্ড ডেনসিটির নির্ভরযোগ্য সমাধান

ধরে নেই আপনি আপনার প্রথম নিশ সাইটে কাজ করছেন, কাজের বেসিক বিষয়াদি আপনি পড়েছেন জেনেছেন, বুঝেছেন। এবার বাকিটুকু অ্যাপ্লাই করতে করতে শিখবেন।

আপনি জেনেছেন কিওয়ার্ড ডেনসিটি বেশি হলে নিশ্চিত সমস্যা, কম হলে সমস্যা হতেও পারে। আপনাকে সুন্দর মীমাংসিত কিওয়ার্ড ডেনসিটি পেতে হবে।

গুলিস্তানের মোড়ে তো আর কিওয়ার্ড ডেনসিটি বিক্রি করে না। তাহলে কিভাবে পাবেন? :3

কপিক্যাট

চাকরির ইন্টার্ভিউ দিতে যাচ্ছেন, যেখানে ইন্টার্ভিউ – সেই কোম্পানিতে যদি বেশিরভাগ হুজুরস চাকরি করে, তাহলে কিন্তু আগে থেকেই বুঝে যেতে পারবেন যে ইন্টার্ভিউ বোর্ডে যারা বসেন তাদের হুজুর পছন্দ। তখন আপনিও গতানুগতিক কোট টাই না লাগিয়ে পাঞ্জাবি পড়ে গেলেন।

যদিও ধরলাম আপনি এটা পড়ে অভ্যস্ত না, কিন্তু আর দশজন কম্পিটিটর থেকে কিন্তু অলরেডি আপনি এগিয়ে গেলেন। (আর যদি অলরেডি হুজুর হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার কাছে আমার প্রশ্ন “হুজুর হয়ে হাঁসো কেন?” । হাহা :p )

গুগল কিন্তু আপনাকে বলেই দিচ্ছে সে কেমন ডেনসিটি চায়। আপনার কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করুন, এরপর টপ ১০ এ যেসব নিশ সাইট এলো এদের কার কেমন ডেনসিটি নোট করেন। এরপর দেখলেন প্রথম সাইট কিওয়ার্ড ব্যবহার করেছে ৫ বার, দ্বিতীয় সাইট ৭ বার, তৃতীয় সাইট ৪ বার, পঞ্চম সাইট ৩ বার করে ব্যবহার করেছে।

এখন এটা থেকে আমি বুঝতে পারছি ৪,৫,৬,৭ এগুলা সেইফ ডেনসিটি। এর মধ্যে আমি ৫/৬ সংখ্যক বার ব্যবহার করাকে পারফেক্ট মনে করবো।

এক্ষেত্রে বড় বড় অথোরিটি সাইট, ই-কমার্স সাইট কে বাদ দিতে পারেন যাদের ডেনসিটি অন্য সবার থেকে খুব বেশি ব্যতিক্রম হবে। কারণ এদেরকে গণায় ধরলে সমস্যা। গুগল অবশ্যই এদের অথোরিটির কারণে, বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে একে অন্য চোখে দেখে।

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোন বিষয়ে ডাক্তার সাহেব ১ লাইনের কথা লিখলেন, আর আমি-আপনি রচনা লিখলাম – দাম আর গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু ডাক্তার সাহেবেরই বেশি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন বিষয়টা।

কপিক্যাট – কন্টেন্ট এর নির্ভরযোগ্য সমাধান

কপিক্যাট

শুধু কিওয়ার্ড না, পুরো সাইটের সবগুলো বিষয়েই কপি করতে পারবেন আপনার কম্পিটিটরদের।

আপনার কন্টেন্ট এর লেংথ কেমন হবে সেটাও গুগল থেকে জানতে পারবেন। আপনার কাঙ্ক্ষিত কিওয়ার্ডে গুগলে যারা র‍্যাংক করে আছে, এদের কার কেমন কন্টেন্ট এর লেংথ নোট করুন। (গুগল করে বিভিন্ন টুল পেয়ে যাবেন ওয়ার্ড কাউন্ট বের করার মতো, তাই বলে দিচ্ছিনা।)

সর্বোচ্চ কতো শব্দ পেলেন আর সর্বনিম্ন কতো শব্দ পেলেন সেটা আপনার জানা হয়ে গেলো। এবার সর্বোচ্চ ওয়ার্ড কাউন্ট নিয়ে যে আছে, সে যদি ১-৩ এর মধ্যে থাকে তাহলে সেটার আশেপাশে বা তার চেয়ে কিছু বেশি দিবেন। আর যদি সে ১-৩ এ না থাকে (পরে আসতে পারে, তবুও বাদ দিচ্ছি) তাহলে কন্টেন্টগুলো একটু পড়ে দেখুন কি অবস্থা, হুদাই আদারে বাদাড়ে কথা লিখে শব্দ সংখ্যা বাড়িয়েছে না আসলেই ভ্য্যালু এড করছে!

যদি বেহুদা কথা থাকে তাহলে আপনি আপনার মতো করে টপ ১০ এর একটা এভারেজ করে কন্টেন্ট দিতে পারেন যেটা আপনার কাছে পছন্দ হয়।

অর্থাৎ কেউ যদি বেশি শব্দ সংখ্যা নিয়ে ভালো করে থাকে, তাহলে তার চেয়ে ভালো এবং বেশি শব্দ ইউজ করবেন। আর যদি বেশি শব্দ নিয়েও পিছে থাকে তাহলে সাইটগুলোর কোয়ালিটি থেকে এভারেজ আপনার মন মতো দিবেন।

এবার আশা যাক কন্টেন্ট সাজাবেন কিভাবে!

নিজের মন মতো না সাজিয়ে কি কি পয়েন্ট এড করা যায় কম্পিটিটরদের থেকেই আইডিয়া নিন। সেগুলোই এড করুন। সবার টা দেখে আইডিয়া নিয়ে, একটা কঠিন আউটলাইন দাঁড়িয়ে যাবে।

কন্টেন্টের মধ্যে কেমন ছবি এড করবেন সেটাও কম্পিটিটরদের থেকে ধারণা নিয়ে নিবেন। প্রথম ৫ জনের মধ্যে কেউ ভিডিও ইউজ করলে আপনিও করবেন।

কপিক্যাট – সাইট স্পিড

কপিক্যাট

হোস্টিং চেকার দিয়ে সহজেই কম্পিটিটর কোথায় সাইট হোস্ট করেছে জানতে পারবেন। এখন মনে করেন কম্পিটিটররা সবাই আইটিনাট বা এক্সনহোস্ট ইউজ করে ভালো স্পীড পাচ্ছে। এখন আপনি নেইমচিপ নিয়ে টেক্কা দিতে আসলে হবে? :p

আপনার সাইট স্পিড কম্পিটিটর এর চেয়ে ভালো না হোক, অন্তত খারাপ যেন না হয়। হতে পারে অনেক দামী সার্ভিস ইউজ করছে কম্পিটিটর, আপনি সেটা নিতে পারছেন না। কিন্তু তাই বলে যদি আপনার সাথে তার স্পিডের আকাশ পাতাল পার্থক্য হয়, তাহলে তো সমস্যা।

২ সেকেন্ডের বেশি যেন কোনভাবেই না নেয়। লাইটপ্সিড ক্যাশ ইউজ করলে ইমেজ, ভিডিও লেজি লোড ইউজ করতে পারেন। অথবা এই প্লাগইন ইউজ করতে পারেন। তাহলে সাইট অনেকটাই ফাস্ট হবে। তবে একসাথে লাইটস্পিডের লেজি লোড আর A3 এর লেজি লোড ইউজ করবেন না, যেকোনো একটা ইউজ করবেন।

শেষ কথা

অতঃপর বিনীত নিবেদন এই যে, মনগড়া কিছু করবেন না এভিডেন্স/প্রমাণ/দলিল ছাড়া। কয়েকটা গুগল সার্চে অনেক কিছু জানা যায়। জানবেন, জানার চেষ্টা করবেন। তাও না জানলে যে জানে তাকে জিজ্ঞেস করবেন। জানা হয়ে গেলে সময় থাকলে অন্যদের জানানোর চেষ্টা করবেন। শুধু নিজে নিজে জেনে জ্ঞানপাপী হওয়ার কি দরকার? জ্ঞান হবে উন্মুক্ত।

Ariful Islam Palash
 

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। টুকটাক লেখালেখির পাশাপাশি বই পড়া, নতুন জিনিস জানার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে তার। ব্যবসার প্রতি মনের টান রয়েছে, ভবিষ্যতে দেশের অন্যতম একজন ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় নিজেকে। প্রয়োজনে ফেসবুকে পলাশ এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। :)