কেন একটা নিশ সাইট ব্যর্থ হয়?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা অ্যাডসেন্সে দশজন মানুষকে সফল হতে দেখে আপনার মনেও আগ্রহ জেগেছে একটা নিশ সাইট করার। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষের থেকে তার সফলতার গল্প জেনেছেন। কেউ শত ডলার, কেউ বা হাজার ডলার উপার্জন করেছে। এসব কিছুই আপনার আগ্রহকে ক্রমেই কাজে নেমে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছে।
যার উপার্জন দেখেছেন, তার সাথে যদি আপনার একটা পার্থক্য করতে বলা হয় তাহলে প্রথম পার্থক্যটাই হবে অভিজ্ঞতার। আপনি জানেন না উনি এর আগে কতো বার ব্যর্থ হয়েছেন। আপনি জানেন না উনি কতো টাকা নষ্ট করেছেন এখানে কিছুটা সফল হওয়ার আগে।
কেন জানেন না?
কারণ - আপনাকে জানানো হয়না।
সবাই তার অনলাইনে কাজের সফলতার গল্প বলতে পছন্দ করে। আমরাও তা শুনতে পছন্দ করি। ব্যর্থতার গল্প কেউ বলেনা। আর আমরা আগ্রহীও হইনা।
কিন্তু সফলতার গল্পের পাশে ব্যর্থতার গল্পটাও জানা জরুরী। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন কোন পথে গেলে আপনি ভুল করবেন, পথ হারাবেন। আর কোন পথে গেলে ঠিক ঠিক পৌছুতে পারবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
আজকের আর্টিকেলে সেরকমই একটা অভিজ্ঞতা দিবো আপনাদের; যাতে করে ভুলগুলো এড়িয়ে সঠিক কাজগুলো করতে পারেন। আর এই অভিজ্ঞতা তৈরী হয়েছে শত শত ব্যর্থ সাইট দেখে।
কখনো নির্দিষ্ট একটি কারণেই সাইট ব্যর্থ হয়েছে। কখনো অনেকগুলো কারণ একসাথে হয়ে এর পেছনে কাজ করেছে। সম্ভাব্য সকল কারণগুলোই আজকের আর্টিকেলে তুলে ধরবো।
দিকভ্রান্ত পথিক
একদম নবীন যারা, অল্প কিছুদিন হলো জানতে শুরু করেছে; কিংবা অন্যান্য কাজের পাশাপাশি টুকটাক মাঝেসাঝে একটু জানার চেষ্টা করেছে তারাই মূলত দিকভ্রান্ত পথিক।
তারা জানেনা ঠিক কিভাবে কাজ করতে হয়। অনেকে জানার জন্যে অনবরত চেষ্টাও করেনা।
আরেকজন ভালো করছে, সেটা দেখে উৎসাহী হয়ে নিশ সাইট বানানো শুরু করে। যেহেতু সে জানেনা বা জানলেও তার জ্ঞান ভাসা ভাসা, তাই তার কাজে অনেক ভুল হবে। হুজুগে পরে রাতারাতি প্ল্যানিং করে কাজে নেমে পড়বো। এক গাদা টাকা ইনভেস্ট করে ফেলবে।
ফলাফল শূন্য।
আপনি যদি নিশ সাইট বানাতে আগ্রহী হন এবং মনে করেন এখনো আপনি সকল বিষয় জেনে উঠতে পারেন নি। তাহলে আপনি দিকভ্রান্ত পথিকদের দলে আছেন।
কাজ করতে নামার আগে বিনীত অনুরোধ - পুরো কাজটা অনলাইন ঘেঁটে জানার, শেখার চেষ্টা করুন। কেইস স্টাডি পড়ুন গুগল এ খুঁজে। আমাদের সুন্দর একটা ফেসবুক কমিউনিটি আছে, সেখানে আপনার প্রশ্ন করুন। একটা না দুইটা না, ১০০ প্রশ্ন করুন।
প্রশ্ন করতে লজ্জার কিছু নেই, জানার আগ্রহ প্রকাশ করতে লজ্জার কিছু নেই। ভুল করে টাকা হারানোয় কষ্ট আছে। নিশ সাইট র্যাংক করতে না পারলে কষ্ট আছে।
ভবিষ্যতের কষ্টের চাইতে লজ্জা ভেঙ্গে প্রশ্ন করার মানসিকতা তৈরি করা ভালো না?
ভুল কিওয়ার্ড নির্বাচন
নতুনদেরও যেমন এই ভুল হয়, অনেক জানাশোনা লোকেরও এই ভুল হয়। কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে ভুল করলে প্রচুর টাকা খরচ করেও যেমন সাইট র্যাংক করানো যায়না, তেমনই সেই টাকা উঠানোর কোন রাস্তাও পাওয়া যায়না।
সঠিক ভাবে কিওয়ার্ড কম্পিটিশন যাচাই করতে না পারাই এখানে মূল কারণ।
আবেগের বসেও নতুনরা ভুল করে। কয়েক ঘণ্টা ঘাটাঘাটি করে কোন একটা কিওয়ার্ড এর সার্চ ভলিউম ভালো হলে, প্রডাক্ট প্রাইস বেশি হলে সেটা নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
বেবি স্ট্রলার, সাইকেল, কুকারিজ, ভ্যাকিউম ক্লিনার ইত্যাদি নানাবিধ জাতীয় নিশ নিয়ে কাজ করে জনগণের কপাল পুড়ে।
আর এমন কোন কিওয়ার্ড টুল নেই যার কম্পিটিশন স্কোর দেখে কিওয়ার্ড নির্বাচন করলে র্যাংক করা যাবে। ব্যাকলিংক, কন্টেন্ট, এইজ, কোয়ালিটি ইত্যাদি নানা প্যারামিটার দিয়ে যাচাই করতে হবে।
কারণ, ভুল করে কঠিন কিওয়ার্ড নিয়ে কাজ শুরু করে দিলে শত চেষ্টা করেও সেটা থেকে ভালো কিছু করা যাবেনা। আপনি দুধের ব্যবসা করবেন, তাই বলে বাজার থেকে গাভী না কিনে ষাঁড় কিনে আনলে সেই ষাঁড় দুধ দিবে নাকি?
খারাপ মানের কন্টেন্ট
নিজের ভুলে বা রাইটারের ভুলে খারাপ কন্টেন্ট পেলে সেটা দিয়ে শত চেষ্টা করেও সাইট র্যাংক করানো সম্ভব না। ভালো কিওয়ার্ড নির্বাচনের পর ভালো মানের কন্টেন্ট নিশ্চিত করাই প্রথম শর্ত। কিন্তু সেখানে যদি ভুল হয়, তাহলে অন পেইজ এসইও পুরোই ধরা।
এরপর সেখানে দুনিয়ার সকল লিঙ্ক করলেও সীমিতই ভালো করার সুযোগ থাকবে।
শুধু এককভাবে রাইটারের দোষ দেয়া যাবেনা খারাপ কন্টেন্ট এর জন্যে। কন্টেন্ট খারাপ পেলে এবং সেটা ব্যবহার করলে আপনিও সমান ভাবে দোষী। কারণ আপনি সেটা যাচাই করতে পারেন নি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে "কিভাবে বুঝবো আর্টিকেল এর গুণগত মান কেমন?" শিরোনামে আমার আর্টিকেল পড়তে পারেন।
মান বোঝার জন্যে ইংরেজিতে আপনার দক্ষতা থাকতেই হবে। যদি না থাকে দক্ষ হওয়ার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।
অভার অপটিমাইজেশন
একসময় ছিল যখন র্যাংকিং এর জন্যে কিওয়ার্ডের ডেনসিটি হাই রাখতে হতো, লিংকে অ্যাংকর টেক্সট এক্স্যাক্ট ম্যাচ অনেক হাই রাখতে হতো। এটা ছাড়া র্যাঙ্ক করা টাফ ছিল।
সময় বদলেছে। এখন সেরকম করলে সেটা অভার অপটিমাইজেশন এর আওতায় পড়বে। আর তার জন্যে সাইট পেনালাইজড ও হতে পারে। অনেক কাজ করেও র্যাংকিং পেছনে থাকতে পারে।
অনেক কাজ করেও তাই র্যাংক করতে না পারলে অভার অপটিমাইজেশন এর বিষয়টা ভালো করে দেখতে হবে। কারণ অলমোস্ট যতোগুলো সাইট আমি দেখেছি আমাদের বাঙ্গালিদের, তাতে এটা অনেক কমন একটা প্রবলেম ছিল।
কিওয়ার্ড ডেনসিটি নিয়ে এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেন - কিওয়ার্ড ডেনসিটি – মারাত্মক যে ভুলের জন্যে সাইট র্যাংক করবেনা!
আর এই আর্টিকেলটিতেও কিছুটা আলোচনা করেছি অভার অপটিমাইজেশন সম্পর্কে।
ভুল লিংক বিল্ডিং
লিংক বিল্ডিং প্রসেসে ভুল করার কারণেও অনেক সময় সাইট র্যাংক করবেনা। এখানেও অভার অপটিমাইজেশন এর বিষয় আছে। অ্যাংকর টেক্সট এ অভার অপটিমাইজেশন এর কারণে সাইটের র্যাংকিং বাধাগ্রস্ত হবে। পেনাল্টিও পেতে পারেন।
যেকোনো গ্রুপে কেউ লিংক বিক্রি করার পোষ্ট করলেই তার থেকে লিঙ্ক কেনার মানসিকতাটাও ভুল। লিংক কিনতে মানা করছিনা, তবে যাচাই বাছাই করে তবেই লিংক কিনবেন।
গেস্ট পোস্ট নেয়ার আগেও অনেক কিছু খেয়াল রাখতে হবে।
তাছাড়া নতুন হিসেবে অনেকেই ফাইভার জাতীয় সাইট থেকে লিংক কিনতে আগ্রহী হন। এটা খুবই ধ্বংসাত্মক। কারণ ফাইভার এ যেসব গেস্ট পোস্ট বিক্রি করা হয়, সেগুলো সাইট তৈরিই করা হয় শুধু লিংক বিক্রি করার উদ্দেশ্যে।
এরকম সাইট খুব দ্রুতই যাকে তাকে লিংক দিয়ে বিষাক্ত সাইট হয়ে যাবে। তাই সেরকম সাইট থেকে লিংক পাওয়া অবশ্যই ক্ষতিকর।
এছাড়া ফাইভার থেকে বা র্যান্ডম যেকারো থেকে পিবিএন লিংক কেনাও সাইটের স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর।
বাজেট
পর্যাপ্ত বাজেট না থাকে কিংবা বাজেট থাকার পরেও ভুল পথে তা খরচ করা সাইট ব্যার্থ হওয়ার আরেকটা বড় কারণ। দেখা যায় এমন একটা নিশ সিলেক্ট করেছেন যেটা র্যাংক করতে অন্তত ১০০০-১৫০০ কিংবা ২০০০ ডলার দরকার। কিন্তু আপনার অভার অল বাজেট ছিল ৪০০-৫০০ ডলার।
সেক্ষেত্রে সব কিছু ঠিকঠাক মতো করার পরেও সাইট র্যাংক করানো যায়না। হয়তো আরও কিছু লিঙ্ক ম্যানেজ করতে পারলে কিংবা আরও কিছু কন্টেন্ট এড করতে পারলে সাইট আরও ভালো করতো। বাজেটের অভাবে আর তাই হয়ে উঠেনা।
অনেকে আবার প্রপার বাজেট থাকার পরেও ভুল ভাবে তা খরচ করে ফেলে। সেক্ষেত্রেও অনেক টাকা থাকার পরেও সঠিক জায়গায় ইনভেস্ট না করার কারণে সমস্যা হয়।
একসাথে অনেকগুলো সাইট শুরু করা
নতুনরা একই সাথে কয়েকটা সাইট শুরু করে দেয় অনেকে। এক্ষেত্রে সঠিক অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে একটা সাইটে যা ভুল হয় বাকি অন্যান্য সাইটেও একই রকমের ভুল হয়। তখন একসাথে সবগুলো সাইটই ব্যার্থ হয়।
তাই নতুনদের জন্যে সবসময়েই একই সময়ে একটার বেশি সাইট নিয়ে কাজ করা উচিত নয়। একটা নিয়ে কাজ করে সেটায় ভালো ফলাফল পেলেই কেবল দ্বিতীয় সাইটে কাজ করা যায়।
পুরনোরা একসাথে ২-৩টার বেশি সাইট নিয়ে কাজ না করা ভালো। সবগুলোতে একই সময়ে মনোযোগ দিতে না পারায় অনেক সূক্ষ্য সুক্ষ্য ভুল রয়ে যায় সাইটে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
শেষ কথা
উপরে যে কারণগুলো বলেছি, এর বাইরেও কোন কারণ থাকতে পারে বলে মনে হয়? তাহলে কমেন্ট সেকশনে জানান। আর নতুন হয়ে থাকলে উপরে বলা সবগুলো বিষয়ই কাটিয়ে উঠে কাজ করার চেষ্টা করুন, আল্লাহর উপর আস্থা রেখে। ইনশাআল্লাহ্ সফলতা আপনারই...