গুগলের প্রথমে র্যাংক করার পর কি করা যাবে আর কি করা যাবেনা?
ওয়েবসাইট শুরু করার পর থেকে যতদিন না পর্যন্ত সেটা গুগলে প্রথমে আসছে ততোদিন পর্যন্ত আমরা অনবরত কাজ চালিয়ে যাই। অনবরত লিংক তৈরির অপ্রতিরোধ্য প্রচেষ্টা। নিজের জ্ঞানের সীমায় যতরকম উপায় আছে র্যাংক করার, সবগুলো বাস্তবায়ন করা হয়।
নতুন পদ্ধতি জেনে সেটার মাধ্যমেও লিংক তৈরি করা, কখনো কখনো কন্টেন্ট এ প্রয়োজনীয় প্রয়োজন আনা। নতুন কন্টেন্ট তৈরি করে ইন্টারনাল লিঙ্কিং করাসহ আরও কতশত কাজ!
এ যেন এক প্রবল ঘূর্ণিঝড়, সামনে যা কিছু আছে সবকিছুকে পেছনে ফেলে, ধ্বংস করে; গুগলের প্রথম স্থানের দিকে যাত্রা।
আলহামদুলিল্লাহ্, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কষ্ট করার পর যদি কাজ হয়ে যায়, আল্লাহ্র ইচ্ছায় র্যাংক করে ফেলে, এরপর যেন সেই প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ক্রমশ দূর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়।
লিংক বিল্ডিং বন্ধ, কন্টেন্ট এর কাজ বন্ধ। অ্যামাজন এর ড্যাশবোর্ড আর অ্যানালিটিক্স ডাটা বার বার রিফ্রেশ দিয়ে দেখা আর চিল করা। এ এক আজব চিল! সব কাজ বন্ধ করে চিল।
আর নতুন লিংক করা হয়না। আর নতুন কিছু শেখা হয়না। নিজেকে বিশাল একজন এসইও এক্সপার্ট মনে হয়। “কুইট্টালচি’’, “ধুমায়ালচি” ভাব এসে পরে নিজের মধ্যে।
এভাবেই অনেক দিন চলে যায় আরামে আয়েশে। এরপর একদিন কোন কম্পিটিটর সাইট আরও বেশি প্রলয়ংকারী লিংক আর কন্টেন্টের ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এসে প্রথম স্থান দখল করে নেয়। নইলে আবেগে কোন কিছু পরিবর্তন করার পর র্যাংক হারিয়ে ফেলে। নয়তো কোন গুগল আপডেটে ধপাস।
এর কারণ কি?
আর কি কিই বা করা যেত প্রথম দিকে থাকার সময় আর কি করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ ছিল সেটাই আজকের আর্টিকেলের মূল উদ্দেশ্য।
গুগলে প্রথমে র্যাংক করার পরে কি কি করা উচিৎ?
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, মন-মগজে ঢুকিয়ে নিন। বহুত ফায়দা হবে।
লিংক বিল্ডিং চালু রাখা
১০০ জনের মধ্যে আমার ধারনা ৯৯ জনই র্যাংক করলে লিংক বিল্ডিং বন্ধ করে দেন, কখনো কখনো আমিও এই ভুল করি। তাই এই অংশটুকু আমার জন্যেও একটি রিমাইন্ডার।
সবকিছু জানারও পরেও, আমরা র্যাংক করে ফেললে নিশ্চিন্ত হয়ে লিংক বিল্ডিং বন্ধ করে দেই। ভুলে যাই লিংক ভেলোসিটি বলে যে কিছু আছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা লিংক বিল্ডিং বন্ধ করে দিলেও, আমাদের পেছনে থাকা নিম্নচাপ ভাইয়া যে ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে। আর তা আমরা খেয়াল করিনা, বা চিল করতে করতে আর কিছু খেয়াল করতে চাইনা।
তাই, আমরা বসে থাকি আর তারা কাজ করে যায়। একটা সময় আমাদের চাইতেও ভালো করে ওভারটেক করে আমাদের পেছনে ফেলে তারা সামনে চলে যায়।
এ কারণে, ১ নাম্বার এ র্যাংক করে ফেললেও নিয়মিত লিংক করা উচিৎ। তবে, আগের মতো করার দরকার নেই। মাসে ১-২টা করে লিংক করলেও চলবে। এটা শুধু আমাদের অবস্থান মেইনটেইন করার জন্য। আগে মাসে ৩-৫টা করে করলেও, এখন ১-২টাতেই আমরা অবস্থান ধরে রাখতে পারবো বলে আশা করি। এক্ষেত্রে ওয়েব ২.০ এর মতো লিংকও চলবে; ব্যাপার না।
সবসময়েই র্যাংক করে থাকা মানি কন্টেন্টে লিংক নিতে হবে এমন না। কোন ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট যেটা থেকে আমাদের উক্ত মানি কন্টেন্টে লিংক নিয়েছি, সেটায় লিংক নিলেও চলবে। আমরা সেক্ষেত্রেও নিয়মিত লিংক জুস পাচ্ছি।
গুগলে র্যাংক করে ফেলার পরে এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
অ্যাংকর এর ব্যবহার
যেহেতু সাইট অলরেডি র্যাংক এ আছে, তাই আর এক্স্যাক্ট ম্যাচ এবং পার্শিয়াল ম্যাচ অ্যাংকর এ লিংক না নিয়ে শুধু ব্র্যান্ডেবল এবং জেনেরিক অ্যাংকরে লিংক নিতে হবে। অন্যথায় হিতে বিপরীত হতে পারে।
কনভার্সন অপটিমাইজেশন নিয়ে কাজ করা
কখনো কখনো এমন হতেই পারে যে ভালো র্যাংক করেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছেনা। সেক্ষেত্রে কম্প্যারিজন টেবিলটা ঠিক আছে কিনা, প্রডাক্টগুলোর স্টক আছে কিনা, ইন্ট্রোডাকশনটা সুন্দরমতো বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরী করছে কিনা; ইত্যাদি বিষয়াদি দেখতে হবে।
কোথাও কোন সমস্যা পেলে একসাথে সব সমস্যা সমাধান না করে; ওয়ান এট এ টাইম করতে হবে। একটা সমাধান করে ১ সপ্তাহ দেখে, যদি র্যাংকে কোন পরিবর্তন না আসে, পিছিয়ে না যায় তাহলে আরেকটা সমাধান করতে হবে।
একসাথে অনেকগুলো পরিবর্তন আনলে র্যাংক পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তখন ঠিক কোন সমস্যা সমাধানের কারণে র্যাংক পেছালো বলতেও পারবেন না। তাই একটা একটা শিবির ধর; ধইরা ধইরা থুক্কু একটা একটা সমাধান ধরেন, ধরে ধরে সমাধান করেন।
কন্টেন্ট আপডেট করা
হতে পারে ২০১৯ সালে আপনি যে আর্টিকেল দিয়েছেন সেটার কিছু অংশ ২০২০ এ এসে অপ্রাসঙ্গিক বা অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছে। এমন কিছু পরিবর্তন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স আইটেমের ক্ষেত্রে বা যেগুলো নিয়মিত আপডেট হয় এমন কিছুর ক্ষেত্রে এটা দরকারী।
এক্ষেত্রেও একসাথে বিশাল পরিবর্তন না করে, অল্প অল্প করে পরিবর্তন করা উচিৎ, যেন র্যাংক এ পরিবর্তন খেয়াল করে কাজ করা যায়।
র্যাংক করে ফেললে কি করা যাবেনা?
এটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সামান্য ভুলের কারণে যদি এতো কষ্ট করে পাওয়া র্যাংক হারিয়ে যায়, নিশ্চয়ই খারাপ লাগবে।
ইউ আর এল
কোন আর্টিকেল র্যাংক করে ফেললে সেটার ইউ আর এল পরিবর্তন করা যাবেনা। ইউ আর এল পরিবর্তন করলে নিশ্চিত ভাবেই র্যাংক ড্রপ করবে, যেটা আর ফিরে নাও আসতে পারে।
তাই মেজর কোন ভুল থাকলেও, আর্টিকেল র্যাংক করলে এটি পরিবর্তন করা যাবেনা ব্রো।
লেখায় অনেক পরিবর্তন
কখনো কখনো এমন হতে পারে যে আপনি র্যাংক করে ফেলেছেন কিন্তু লেখায় অনেক ভুল রয়ে গেছে বা এমন কিছু আছে যার কারণে কনভার্সন কম হচ্ছে। বা এর কোনটাই না হয়ে আপনার কাছে “কেমন যেন লাগছে” তাই লেখায় পরিবর্তন আনা জরুরী মনে করছেন।
কেউ কেউ তো “আমি এতো নাম্বারে র্যাংক করে আছি, কন্টেন্ট পরিবর্তন করলে কি র্যাংক ড্রপ করবে?” এমন পর্যায়েও চলে যান।
এমনটা করা যাবেনা।
আগের অংশে যেমন বললাম, খুব বড় সমস্যা থাকলেও এক সময়ে একটা করে পরিবর্তন করতে হবে। যাতে র্যাংক ড্রপ করলে কোনটার কারণে করছে জানা যায়। আর ড্রপ করলে পরিবর্তন রিস্টোর করে আবার ফিরে আসা যায়।
আর, পুরো কন্টেন্ট আপডেট কখনোই করা উচিৎ না। এতে নিশ্চিত র্যাংক হারাবেন এবং ফিরে নাও আসতে পারেন আর।
৪০০-৫০০ শব্দ পরিবর্তন করা লাগলেও সেটা ২০-৫০ শব্দ করে পরিবর্তন করা গেলে ভালো।
কখনো এমন হতে পারে কোন প্রডাক্ট আপনি ১-২-৩ এ দিয়েছিলেন রিভিউতে। কিন্তু এখন আর সেটি বাজারে নেই। কেউ কেউ সেই কন্টেন্ট এর অংশ ডিলেট করে নতুন প্রডাক্ট রিভিউ দিয়ে রিপ্লেস করেন। আমার মতে, এটি না করা উচিৎ।
এমন হলে স্টক আউট বা বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রডাক্টকে একদম শেষের দিকে দিয়ে (যেমন ১১ নাম্বার হিসেবে), নতুন প্রডাক্টকে ১ নাম্বার হিসেবে দিতে পারেন। এতে করে কন্টেন্ট আগের মতোই থাকলো প্রায়, শুধু নতুন বিষয় যোগ হয়ে আর্টিকেল আপডেট হলো। ইনশাআল্লাহ্ এতে উপকার ছাড়া অপকার হবেনা।
থিম পরিবর্তন
হতে পারে একসময়ে আবেগে কোন থিম দিয়েছিলেন, “এখন অনেক পয়সা হয়ে গেছে” বা “আর ভালো লাগেনা” – এই যুক্তিতে থিম পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন।
এমন কাজ আপনার জন্যে নিষিদ্ধের মতো। থিম পরিবর্তন করলে অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় র্যাংক ড্রপ করবেন, আর এমন হতেই পারে যে আর র্যাংক এ ফিরবেন না। ব্যতিক্রম হতে পারে। তবে থিম পরিবর্তন না করা বুদ্ধিমানের কাজ।
তবে থিমের কারণে কনভার্সন রেট কম হয়ে থাকলে, থিম অনেক হাবিজাবি কোড সম্বলিত ভারী হয়ে থাকলে (যার কারণে লোডিং টাইম বেশি হতে পারে), মোবাইল ফ্রেন্ডলি না হয়ে থাকলে থিম পরিবর্তন করা যায়। কারণ এখানে আপনি পরিবর্তন না করলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, আর এমনিতেও আপনার থেকে এসব বিষয়ে ভালো করে খুব শীঘ্রই যে কেউ না কেউ আপনাকে আউটর্যাংক করে ফেলবে সেটা ধারণা করা যায়।
এস এস এল ইস্যু
যেহেতু এস এস এল গুগল কর্তৃক স্বীকৃত র্যাংকিং ফ্যাক্টর (এখনো খুবই মাইনর), তাছাড়া পয়সা ছাড়াই পাওয়া যায় এখন; তাই সাইটের শুরু থেকেই এস এস এল ব্যবহার করা উচিৎ।
তবে যদি কোন কারণে এটি ব্যবহার না করেও র্যাংকে চলে আসেন, তাহলে এস এস এল ব্যবহার না করলেও হবে । যদিও ক্রোম ঘাপলা করে, তবে এটা ম্যাটার করবেনা। কারণ মানুষ এতো কিছু বুঝেনা, এখনো কোটি সাইট আছে এস এস এল ছাড়া যারা র্যাংক ও করছে এবং পাবলিক এগুলো পড়ছেও।
তবে যদি এস এস এল এড করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে সাময়িক র্যাংক ড্রপ এর ব্যাপারে প্রস্তুত থাকবেন। আর এটি এমন সময়ে করা উচিৎ, যখন কিছুটা ডাউন সিজন চলে নিশের।
হোস্ট পরিবর্তন
এক্ষেত্রে যদি যদু মদু হোস্টিং এ থাকেন, তাহলে সেটা থেকে ভালোটায় যাওয়া যাবে, যেখানে গেলে স্পিড ইম্প্রুভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া পরিবর্তন না করাই উত্তম।
স্পিডে খুব সমস্যা না থাকলে বা সাপোর্ট সংক্রান্ত মেজর কোন ইস্যু না থাকলে অলরেডি যে হোস্টের সাথে আছেন, তার সাথে থাকাই ভালো।
কারণ, হোস্ট পরিবর্তনের সাথেও স্পিডের উঠানামা জড়িত।
শেষ কথা
এইতো মোটামোটি এই বিষয়গুলো মেনে চললে ইনশাআল্লাহ্ র্যাংক ধরে রাখা যাবে। যদি না গুগলের মেজর কোন আপডেটে কুপোকাত হন। আল্লাহ্ চাইলে পরবর্তীতে এটি নিয়ে আলোচনা করবো। আর আমিও ভাই মানুষ, মারা টারা, র্যাংক ড্রপ, পেনাল্টি এগুলা আমার সাথেও হয়। 🤐
কেউ যদি দাবী করে তার সাথে হয়নাই এখন পর্যন্ত একবারও, তাহলে তার কথা শোনার দরকার নাই। এরকম মলম বিক্রেতা থেকে সাবধান।
আস সালামু’আলাইকুম