স্প্যাম ইমেইল কি এবং কিভাবে চেনা যায়?

একটা সময় ছিল যখন স্প্যাম ইমেইলের ব্যাপক দাপট ছিল। বিভিন্নভাবে বোকা বানিয়ে মানুষের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হতো নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। বর্তমানে ইমেইল সার্ভিস প্রোভাইডারদের দারুণ স্প্যাম ফিল্টারের কারণে অনেকেই ভুলতে শুরু করেছে স্প্যাম ইমেইল কি।

নাইজেরিয়ার কোন ব্যাংকার আপনাকে মেইল পাঠিয়েছে, যে তার কাছে থাকা কোটি কোটি ডলার সে আপনার নামে দিয়ে দিতে চায়, কিংবা ভিনদেশি কোন মেয়ে তার গোপন ছবি পাঠাবে আপনাকে এমনই নানা ধরেনর ছল চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে মানুষের ইনবক্সে আসতো স্প্যাম ইমেইল।

অনেকেই না বুঝে এসবের ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। কেউ বেঁচে গেছেন, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এখন দিন বদলেছে, আগের মতো এতো সহজভাবে স্প্যাম আসে না। এখন স্প্যাম আসে নিত্য নতুন পদ্ধতিতে।

এখন স্প্যাম আসে যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর লটারিতে আপনি জিতেছেন, সেটা দেয়ার জন্যে এর প্রধান আপনার  নাম, লিঙ্গ, দেশ এবং মোবাইল নাম্বার চেয়েছেন। কিংবা মাইক্রোসফট এ আপনি চাকরির জন্যে নির্বাচিত হয়েছেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তাদেরকে ইমেইল করে দিতে হবে। তাছাড়া ফেসবুক, টুইটার এর মেইল হুবুহু কপি করে কাস্টমাইজ করে ফিশিং এর চেষ্টা করে অনেকে। ফিশিং নিয়ে পরবর্তীতে কোন লেখায় বিস্তারিত লিখবো।

তো এতক্ষণে পাঠক নিশ্চয়ই বুঝে ফেলছেন যে স্প্যাম ইমেইল কি। অনেকে হয়তো স্প্যাম ইমেইল কিভাবে চেনা যায় সেটাও আঁচ করতে পেরেছেন। এবার চলুন কিভাবে স্প্যাম ইমেইল চেনা যাবে সেটা বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করি…

অফার

অস্বাভাবিক কিছু অফার করা – বেশিরভাগ স্প্যাম ইমেইল অস্বাভাবিক কিছু অফার করেই আসে। কেউ হয়তো আপনাকে বললো যে পেপসি এ বছর লটারির মাধ্যমে সৌভাগ্যবান ১০ জনকে ১ মিলিয়ন ডলার করে দিচ্ছে। আর সেই দশজনের মধ্যে আপনিও একজন।

কি? শুনতে খুব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে? এটি মোটেও স্বাভাবিক না।

পেপসির তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে আমাকে-আপনাকে ১ মিলিয়ন ডলার কোন কিছু ছাড়াই দিয়ে দিবে। এই ধরণের কিছু চোখে পড়লে সোজা বুঝে নিবেন যে এগুলো স্প্যাম ইমেইল।

নাইজেরিয়ার কোন এক ডাক্তার আপনাকে তার ব্যবসায়িক পার্টনার বানাতে চায়, এরজন্যে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রাইভেট তথ্য তাকে দিতে হবে। এরপর সে আপনাকে বিনা পয়সায় তার ব্যবসার পার্টনার বানিয়ে দিবে। এমন ইমেইল পেলে নিশ্চয়ই খুশিতে পুলকিত হয়ে যেতে মন চাইবে? কিন্তু একজন ব্যবসায়ী আপনাকে কোন যোগ্যতা ছাড়াই, টাকা ইনভেস্ট করা ছাড়াই কিভাবে আপনাকে পার্টনার বানাবে?

তাও আবার নিজের দেশের হলে এক কথা! সুদূর নাইজেরিয়া থেকে !! যেকোনো দেশের নাম নিয়েই এই টাইপের স্প্যাম মেইল আসতে পারে।

একটা মেয়ে আপনাকে তার নগ্ন ছবি পাঠাতে চায় বা বন্ধুত্ব করতে চায় – শুনতে একটু খারাপ শোনালেও এই ধরণের মেইল অহরহ আসে। কারণ আর দশটা স্প্যাম মেইলের চেয়ে এইসব মেইলের রেসপন্স তুলনামূলক বেশি। যেহেতু একটা স্পর্শকাতর ব্যাপার এর মধ্যে জড়িত আছে, তাই অনেকেই এই ধরণের স্প্যাম মেইলে ভিক্টিম হন।

অনুগ্রহপুর্বক এই ধরণের কিছু পেলে একটু মাথা খাটাবেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন যে এগুলো সম্পূর্ণ ধোঁকাবাজি।

পেপসি স্প্যাম ইমেইল

একটি স্প্যাম ইমেইলের উদাহরণ

বড় কোন কোম্পানির নাম দিয়ে মেইল – বড় কোন কোম্পানি বা সরকারি নামেও স্প্যাম মেইল আসতে পারে। পুরো মেইলটা এমনভাবে স্প্যামার সাজায় যে কারও বোঝার জো নেই যে এটা স্প্যাম। এই ধরণের কোন মেইল পেলে অবশ্যই মেইলের এড্রেস দেখে নিবেন, তখনই বুঝতে পারবেন ঝামেলা কোথায়।

মেইলের @ এর প্রথম অংশ কোম্পানি বা সরকারি কোন কিওয়ার্ড থাকে, আর পরের অংশে থাকে সাধারণ কোন ইমেইল সার্ভিস প্রোডাইডারের ডোমেইন অথবা সাধারণ কাস্টম ডোমেইন।

জিমেইল, ইয়াহু বা অন্য কোন সাধারণ ডোমেইন এ হোস্ট করা মেইল থেকে নিশ্চয়ই সরকার বা বড় কোন কোম্পানি আপনাকে মেইল করবেনা। যদি করার প্রয়োজন পড়েই তাহলে তাদের নিজস্ব ডোমেইনে করা ইমেইল এড্রেস দিয়েই করবে।

ফেসবুক আপনাকে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে বলছে – ফেসবুক আপনাকে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে বলছে অথবা বলছে যে আগামী কিছুদিনের মধ্যে ফেসবুক টাকা নেয়া শুরু করবে। তবে আপনি যদি মেইলে দেয়া লিংকে ক্লিক করে লগ ইন করেন তাহলে আপনি বিনা মূল্যেই চালাতে পারবেন ফেসবুক।

এই জাতীয় মেইল পুরো ভুয়া। কোনদিনই এই ধরণের মেইলে একশন নিবেন না।

আর ফেসবুক যদি আপনাকে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে বলে কোন মেইল দেয়, তাহলে কোন ক্রমেই মেইলে দেয়া লিঙ্কে ক্লিক করে লগ ইন করার দরকার নেই। সরাসরি ফেসবুক ডট কম এ চলে গিয়ে সেখান থেকে পরিবর্তন করে নিয়েন।

অস্বাভাবিক রকম বানান ভুল – বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্প্যাম মেইলগুলোতে বানানভুলের পসরা দেখা যায়। কোন মেইলে অতিরিক্ত বানান ভুল থাকলে ধরে নিতে পারেন যে সেটি একটি স্প্যাম মেইল।

তবে, সবে কম্পিউটারে টাইপ করতে শেখা আপনার আপন কোন বন্ধুও হয়ত ডাহা ডাহা বানান ভুল করে আপনাকে মেইল করতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি আপনি কনফিউজ হন তাহলে আপনার বন্ধুটিকে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিতে পারেন যে মেইলটি সেই পাঠিয়েছে কিনা।

অ্যাটাচমেন্ট – সম্পূর্ণ অপিরিচিত কারও কাছ থেকে অ্যাটাচমেন্ট সহ মেইল পেলে স্প্যাম হিসেবে ধরতে পারেন। অ্যাটাচমেন্টের সাথে ভাইরাস জুড়ে দিয়ে এই ধরণের স্প্যাম মেইল পাঠানো হয়ে থাকে। যতোই রসকষ দিয়েই মেইল লিখুক না কেনো সেই অ্যাটাচমেন্ট খোলার দরকার নেই।

তারপরেও যদি নিজের আগ্রহ নিবারণ করতে না পেরে সেই অ্যাটাচমেন্ট খুলেন তাহলে অনুগ্রহ পূর্বক রেডি থাকবেন খুব শীঘ্রই ভাইরাস দ্বারা পর্যদুস্ত হতে। সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা খাল কেটে কুমির আনার মতোই হবে।

উপরে যেভাবে স্প্যাম মেইল চেনার যে উপায়গুলো দেয়া হলো এর বাইরেও হয়তো আরও নানা পদ্ধতিতে স্প্যাম আসতে পারে। তবে আপনি যদি জিমেইল বা ইয়াহু মেইল ব্যবহার করেন তাহলে অনেকটা নিশ্চিত থাকতে পারেন এই মেইলগুলো সরাসরি আপনার স্প্যাম ফোল্ডারে চলে যাবে। কারণ মেইল সার্ভিস প্রোভাইডারগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী। তাদের সিস্টেম যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন। তারপরেও চিনে রাখা ভালো। যদি কখনো কোন কারণে স্প্যামি কোন মেইল আপনার ইনবক্সে চলে আসে তাহলে সেটা থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন।

স্প্যাম থেকে মুক্ত থাকুন, নিজেও স্প্যামিং করা থেকে বিরত থাকুন। 🙂

 

Ariful Islam Palash
 

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। টুকটাক লেখালেখির পাশাপাশি বই পড়া, নতুন জিনিস জানার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে তার। ব্যবসার প্রতি মনের টান রয়েছে, ভবিষ্যতে দেশের অন্যতম একজন ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় নিজেকে। প্রয়োজনে ফেসবুকে পলাশ এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। :)