ওয়েবসাইটের লিংক ভেলোসিটিতে গুরুত্ব না দিয়ে যেভাবে আমরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি!
লিংক ভেলোসিটি!
এসইওর কাজ করছেন, অথচ এই বিষয়টির সাথে যদি আপনার পরিচয় না থাকে তাহলে এখনো অনেক কিছু জানার বাকি আছে আপনার। আর যদি ইতোমধ্যেই বিষয়টি সম্পর্কে জেনে থাকেন, কতোটা গুরুত্ব দিচ্ছেন এ বিষয়ে?
যিনি জানেন না, তিনি নিজের অজান্তেই এখানে ভুল করছেন। আর যিনি জানেন, তিনিও হয়তো খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে ভুল করছেন।
লিংক ভেলোসিটি নিয়ে এসইও জানা লোকদের মধ্যে অবশ্য মতোনৈক্য আছে। কেউ কেউ বলছেন অবশ্যই এর গুরুত্ব আছে। কেউ কেউ আবার গুরুত্ব নেই বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।
কে সঠিক, কে বেঠিক আমি সেদিকে যাচ্ছিনা। তবে আমার অভিজ্ঞতা বলছে, অবশ্যই এর গুরুত্ব আছে।
গুরুত্ব আছে বুঝলাম, কিন্তু লিংক ভেলোসিটি আসলে কি?
ওয়েবসাইট এর লিংক বিল্ডিং এর গতিকেই মূলত লিংক ভেলোসিটি বলা হয়। আপনি আজকে একটা ওয়েবসাইট শুরু করলেন। এরপর ১৫ দিন পর থেকে লিংক বিল্ডিং করা শুরু করলেন। এভাবে করে আপনি পুরো এক বছর সময় অল্প অল্প করে লিংক বিল্ড করতে থাকলেন।
এইযে আপনি লিংক বিল্ডিং করলেন, সেটা যে গতিতে হয়েছে সেটাই মূলত লিংক ভেলোসিটি।
উপরের ছবিতে জানুয়ারি ২০১৫তে শুরু করা একটা ওয়েবসাইটের বর্তমান পর্যন্ত লিংক এর গতি দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু স্পাইক থাকলেও, পুরোটা সময় একটা সুন্দর লিংক ভেলোসিটি মেইনটেইন করা হয়েছে। প্রতি মাসে প্রায় কাছাকাছি গতিতে লিংক তৈরি করা হয়েছে।
এটি সুন্দর লিংক ভেলোসিটির উদাহরণ। এবার নিচের ছবিটি দেখুন -
উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে এপ্রিল মাসে শুরু করা সাইটটি হঠাত করেই জুন মাসে ৮০টি ব্যাকলিংক তৈরি করে ফেলে। পরের মাসে মাত্র ১১টি নতুন ব্যাকলিংক সহ ৯১টি ব্যাকলিংক হয়। এরপর আগস্টে মাত্র ৩টি। এরপর বাকি সময় আর তেমন আহামরি লিংক তৈরির চেষ্টা দেখা যায়না।
অর্থাৎ এটি খারাপ লিংক ভেলোসিটির উদাহরণ।
বিষয়টা অনেকটা উপমহাদেশের মানুষের শবেবরাতের ইবাদতের মতো। সারাবছর ইবাদাত খুব কম করে বা করেই না, কিন্তু একদিনে ইবাদতের ভেলোসিটি অনেক বাড়িয়ে দেয়। এরকম ইবাদত আল্লাহ্র কাছে কতোটা গ্রহণযোগ্য আমার জানা নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি সারাবছর নামায পরে আর অন্যান্য ইবাদত নিয়মিত করে, সে যদি সেই দিনও একই রকম শুধু ফরয ইবাদাত করে, তাহলে আমার মতে প্রথম ব্যক্তির চাইতে ইবাদতের ভেলোসিটি মেইনটেইন করা ব্যক্তি বেশি ভালো করছে।
কাউকে মনে কষ্ট দেয়া আমার উদ্দেশ্য না। কারও মনে আঘাত লাগলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। 🙂
কি করণীয় তাহলে?
একটা ওয়েবসাইট শুরু করার পর ধীরে ধীরে একটা গতি মেনে আগানো উচিৎ, প্রথম মাসে যদি ১০টা লিংক করা হয়, দ্বিতীয় মাসেও ১০টা, ২০টা করা উচিৎ। আর যদি দ্বিতীয় মাসে আরও বেশি করা হয় তাহলে পরবর্তী মাসগুলোতেও একইরকম গতি মেইনটেইন করা উচিৎ।
হঠাত করে এক মাসে দশটা করে পরের মাসে ১০০টা করা, আবার পরের মাসে কোন লিংক না করে, তাঁর পরের মাসে ৫-১০টা করা অনুচিত এবং এতে ওভারঅল র্যাংকিং এর উপর প্রভাব পরে।
আমরা যে ভুলটা করি তা হলো - কোন আর্টিকেল র্যাংক করাতে চাইলে ১-২ মাসে যা লিংক করা দরকার করে ফেলি। এরপর অপেক্ষা করি। আর কোন লিংক করিনা। কিন্তু ১-২ মাসে লিংক না করে সেটা ধীরে ধীরে ৪-৫ মাস সময় নিয়ে করলে আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সাইট অল্প লিংকে ভালো করে। সেই সাথে কিওয়ার্ডের র্যাংকিং স্থায়িত্ব পায় বেশি।
এক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো, লিংক যখন আমরা তৈরি করবো খুব দ্রুতগতিতেও করবোনা আবার খুব স্লো ও করবোনা। একটা নির্দিষ্ট গতি মেইনটেইন করে আগাবো। আর এটাই সবচেয়ে বেস্ট প্র্যাকটিস।
এখন লিংকের ইফেক্ট বুঝতেও বেশ সময় লাগে। এখন মিস্টার আলু যদি একটা আর্টিকেলে এক মাসে ২০টা লিংক করে ফেলে। আর এর পরের মাসেও যথাযোগ্য র্যাংক না পেয়ে আরও ২০টা করে। তাহলে ৪০টা হয়ে গেলো। এর জন্যে নিশ্চয়ই অনেক টাকা লাগবে।
এরপর দেখা হলো তৃতীয় মাসে সাইট র্যাংক করলো মিস্টার আলুর। আর সে ভাবল ৪০ লিংকের কারণেই র্যাংক করলো।
আর ওদিকে মিস্টার পটল প্রথম মাসে ৪-৫টা করলেন, দ্বিতীয় মাসে ৫-৭টা করলেন। আর তৃতীয় মাসে তাঁর সাইট র্যাংক করলো।
একই কিওয়ার্ডে দুইজন কাজ করে একজন লিংক করলো ৪০, আরেকজন করলো ১০-১২টা। আর দুইজনেই র্যাংক করলো।
যেহেতু লিংক এর ভ্যালু বুঝতে এখন সময় লাগে, তাই আস্তে আস্তে করলে হয়তো মিস্টার আলুরও অল্প লিংকেই সাইট র্যাংক করতো। কিন্তু তাড়াহুড়া করতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ করে ফেললো বেচারা।
এরকম অনেক অভিজ্ঞতা আছে আমার পরিচিত লোকজনদের সাথে। তারা খুবই এগ্রেসিভভাবে লিংক করতে চাচ্ছে, আমি মানা করছি। পরে দেখা গেলো আর নতুন লিংক না করেই সাইট র্যাংক করে ফেললো। অথচ লিংক করতে গেলে আরও ৪০০-৫০০ ডলার লাগত।
শেষ কথা
আমি আশা করছি যে, একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কম আলোচনা করা বিষয়ে কিছুটা হলেও আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি। চেষ্টা করুন একটা নির্দিষ্ট লিংক ভেলোসিটি মেইনটেইন করে সুন্দর গতিতে লিংক তৈরি করার। তুলনামূলক কম লিংকে, কম খরচে ভালো করতে পারবেন বলে আমি আশাবাদী, ইনশাআল্লাহ্।