অনলাইনে প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে আমি কি করি?

আপনি যদি অনলাইনে কাজ করে থাকেন, তাহলে খুব ভালো করেই জানেন এখানে প্রোডাক্টিভ থাকা কতোটা কষ্টের। এক-দুই মিনিট পর পর এই নোটিফিকেশন, সেই মেসেজ, ইমেইল, নিত্যনতুন মাথা খারাপ করার টপিক, ব্রেকিং নিউজ ইত্যাদি নানা জিনিসের মধ্যে মনোযোগ মূল কাজ থেকে অন্য কোথাও সরে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।

আমারও যায়।

তারপরেও যতোটুকু পারা যায় চেষ্টা করি প্রোডাক্টিভ থাকার জন্যে। দিনের জন্যে যতোটুকু কাজ করার পরিকল্পনা থাকে সেটা পুরোপুরি করে ফেলার যথাসাধ্য চেষ্টা করি।

অনলাইনে প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্যে অনেক ভালো ভালো রিসোর্স আছে, তারপরেও আমার ছাতামাথা পড়তে বসেছেন এর জন্যে প্রথমেই একটা ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য।

আমি কোথাও থেকে আইডিয়া নিয়ে, পড়াশোনা করে কিছু লিখছিনা। আমি নিজে মূলত যেভাবে প্রোডাক্টিভ থাকার চেষ্টা করি, সেটারই একটা টেক্সট রূপ বলা যায়।

জেদ এবং প্রবল ইচ্ছা

জেদ এবং প্রবল ইচ্ছা

বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, প্রোডাক্টিভ থাকার সবচেয়ে বেশি কার্যকর আমার জন্যে জেদ। ওমুক এমন করেছে, আমিও করতে পারবো ঈনশাআল্লাহ।

ও পেরেছে, আমাকেও পারতে হবে।

এমন চিন্তা-ভাবনা থাকলে আমার জন্যে কাজ করা সহজ হয়। আমি জানি আমাকে কোথায় যেতে হবে এবং এর জন্যে আমাকে কিভাবে কাজ করতে হবে, কি পরিমাণে করতে হবে।

এরপর সে অনুযায়ী কাজ করে যাই।

সাধারণত মানুষ অন্যের ভালো দেখে হিংসা করে, কিন্তু সেটা কোন ফলাফল বয়ে আনেনা।

ঐ ছেলেটা ভালো করেছে, আলহামদুলিল্লাহ। আমিও ভালো করবো ঈনশাআল্লাহ। এমন চিন্তা মাথায় রাখতে হবে, আর সে অনুযায়ী কাজও করতে হবে। তাহলে না সফলতা আসবে।

আমি যখন ক্লাস সেভেনে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হই, তখন টেকনোলজি সম্পর্কে একদমই অজ্ঞ ছিলাম। আমার আশেপাশের সবাই কম্পিউটার-ইন্টারনেট নিয়ে অনেক কিছু জানতো। আমার নলেজ একদম জিরো।

কিচ্ছু জানতাম না।

কিভাবে গুগলে সার্চ করতে হয়, তাও না।

চিন্তা করতে পারেন?

ধীরে ধীরে নিজের মধ্যে জেদ আসলো, ওরা জানে, আমি জানিনা।

কেনো??

আমাকেও জানতে হবে। বাসায় কম্পিউটার ছিলনা, সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে ইন্টারনেট চালানো শিখলাম এক বন্ধুর কাছে। ধীরে ধীরে সামহোয়্যারইনব্লগ এর খোঁজ পেলাম একটা ম্যাগাজিনে।

এরপর সামু পড়ার একটা নেশা হয়ে গেলো। প্রতিদিন পড়তাম, একসময় নিজেরও লিখতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু বাংলা যে লিখতে পারিনা!

একেক জায়গা থেকে একেকটা অক্ষর কপি করে করে বাংলায় প্রথম আর্টিকেল লিখেছিলাম।

আমার মতো এতো খারাপ অবস্থা নিশ্চয়ই আপনাদের কারও হয়নি, ছিলনা।

ধীরে ধীরে নিজেকে আরও ইম্প্রুভ করলাম। টেকটিউনস এর মডারেটর হলাম। এরপর আরও পরিবর্তন, আরও জেদ, আরও ইচ্ছা।

বাকিটা ইতিহাস…

এই জেদের আর আর প্রবল ইচ্ছার কারণেই এখন আজকের আমি।

টু ডু লিস্ট

টু ডু লিস্ট

প্রতিদিন আমি কি কাজ করবো এবং কোনটার পরে কোনটা করবো সেটার একটা লিস্ট রাতের ঘুমানোর আগে বা সকালে উঠার পরেই করে ফেলার চেষ্টা করি। অন্য কোন ব্যস্ততা থাকলে কম্পিউটারের সামনে বসেই লিস্ট করে ফেলি এখন আমাকে কি কি করতে হবে।

এরপর লক্ষ্য রাখতে হবে যে দিনশেষে টু ডু লিস্টের মধ্যে থাকা সব কাজগুলোই আমি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে শেষ করেছি।

অনেকেই যে ভুল টা করে সেটা হচ্ছে, যতোটুকু কাজের চাপ সে নিতে পারবেনা তার থেকে বেশি লিখে রাখে। লিখতে তো আর কষ্ট নেই :p

যেমন, হয়তো সে আজকে ১৫ টা ব্লগ পোস্ট পড়বে বলে লিস্ট করেছে, অথচ ৫টার বেশি পড়তে গেলেই আর তার ধৈর্য ধরে রাখা যায়না।

তো, এমনটা আমি করিনা, আপনাদেরও করা যাবেনা। যতোটুকু ওয়ার্কলোড নিতে পারবেন, ঠিক ততোটুকুই নিবেন।

টু-ডু লিস্ট এর জন্যে আমি গুগল কিপ ব্যবহার করি মূলত, আর মাঝে মাঝে ডায়েরি। তবে অনেস্টলি স্পিকিং অ্যাপস ট্যাপস এর চেয়ে কাগজ কলমই বেশি কাজে দেয়। নয়তো এতোসব ফাংশনের ভিড়ে হারিয়েই যাবেন।

মার্কেটে অনেক দারুণ দারুণ অ্যাপস আছে এইসবের জন্যে। আমার প্রয়োজন পড়েনা। আপনি চাইলে ইউজ করতে পারেন।

লিস্টে এমন কিছু রাখবেন যেটা খুব বেশি স্ট্রেস না নিয়েই আপনি করে ফেলতে পারেন। এটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

মাল্টি-টাস্কিং বন্ধ

মাল্টি টাস্কিং

একই সাথে একাধিক কাজ করতে গেলে শুধু আমি কেন, অন্য যেকেউই ঠিকভাবে কোন কাজ করতে পারবেনা।

অনেকের ধারণা সে আর দশটা মানুষ থেকে আলাদা, সে চাইলেই একসাথে একাধিক কাজ খুবই সুন্দরভাবে করতে পারে।

কিন্তু কেন যেন আমার কাছে এটা বোগাস মনে হয়।

তাই যখন কাজ করি, তখন অন্যসবকিছুই বন্ধ রাখার চেষ্টা করি। যতোক্ষণ না আমি কাজ শেষ করছি ততোক্ষণ আমি অন্যকিছুতে যাবোনা, সেটা যতোই আকর্ষণীয় হোক না কেন।

এভাবে করে করলে দেখা যায় একাধিক কাজ একইসাথে করতে গেলে মোট যে সময় লাগতো তার চেয়ে অনেক কম সময়ে করা যায়।

উদাহরণ – কিওয়ার্ড রিসার্চের সময়, একই সাথে কিওয়ার্ড বের করা এবং তার কম্পিটিশন চেক করতে গেলে বেশ লম্বা একটা সময় লেগে যাবে।

তাই প্রথমে সিড কিওয়ার্ড যতোগুলো পারা যায় বের করে নেই, এরপর কম্পিটিশন চেক করে সর্ট লিস্ট করি।

এভাবে সময়টাও বেঁচে যায়, ব্রেইন্সটোর্মিং এও সুবিধা হয়।

যারা বিশ্বাস করেন মাল্টি-টাস্কিং এ আপনি খুবই অভিজ্ঞ, তারা এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।

নিজেকে নিজে পুরস্কার দেয়া

খানা দানা

ইয়ে মানে নিজেকে পুরষ্কৃত করার সাথে খানা দানার কোন সম্পর্ক নেই আমার 😉

হাস্যকর শোনাচ্ছে?

হাহা, এমনটাই হওয়ার কথা। কিন্তু এটা অন্যতম একটি প্রোডাক্টিভিটি বুস্টার।

যেমন ধরূণ, আমি নওমান আলি খানের ভক্ত। আমি ডিসাইড করলাম, আজকে অন্তত এক ঘন্টা আমি তার লেকচার শুনবো। যদি সেটা করতে পারি, তাহলে আমি বাইরে আড্ডা দিতে যাবো।

তা না হলে যাবোনা।

তো বিষয়টা এমন দাঁড়ালো যে একটা ছোট বাচ্চাকে বলা হচ্ছে “বাবা, পড়াশোনা করো। তাহলে তোমাকে একটা কম্পিউটার গেইম কিনে দিবো।“

তখন সে গেইম পাওয়ার লোভে পড়বে।

অনলাইনে আপনাকে সেভাবে করে লোভ দেখানোর কেউ নেই।

তাই নিজেকেই নিজে দেখাতে হবে। যদি যে গোল সেট করেছিলাম সেটা করতে না পারি, তাহলে রিওয়ার্ডটাও আমি পাবোনা।

পারলে পাবো।

এটা আপনি অনলাইনে যেকোনো কাজের ক্ষেত্রেই করতে পারবেন।

যারা আরও এক্সট্রিম চান, তারা নিজেকে নিজে শাস্তির ব্যবস্থাও করতে পারেন। যেমন, হয়তো আপনি শুটকি খান না, কিন্তু নিজেকে নিজে প্রমিস করবেন, আজকে রাতের মধ্যে যদি ঐ ক্লায়েন্টের কাজটা শেষ করতে না পারি বা ভালো একটা নিশ বেড় করতে না পারি, তাহলে আগামীকাল আমি দুইবেলা শুটকি দিয়ে ভাত খাবো।

এটাও কাজে লাগতে পারে। আমি এসব পেনাল্টি নিজের জন্যে সেট করিনা।

বেশি এক্সট্রিম :

প্রয়োজনমতো ঘুম

অনিয়মিত অপর্যাপ্ত ঘুম প্রোডাক্টিভিটিকে নষ্ট করে। যেমন – ঘুম কম হলে আমার মাথার পেছনে বাম দিকে বেশ ব্যথা করে। সেই অবস্থায় কাজ টাজ করা তো দূরের কথা, স্বাভাবিকভাবে জেগে থাকাও আমার জন্যে কষ্টকর।

আপনাদের কারও হয়তো এমন কিছু নেই, কিন্তু প্রয়োজনমতো পর্যাপ্ত ঘুম অবশ্যই দরকার। অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো টা নিশ্চিত করবে।

আর চেষ্টা করবেন প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ার। এতে করে শরীর অভ্যস্ত হয়ে পড়বে এবং বাকি সময় প্রোডাক্টিভ থাকতে হেল্প করবে।

আমি চেষ্টা করি যেন আমার ঘুম কম না হয়।

ফজরের পর কাজ শুরু করা

অবাক করার মতো হলেও, ফজরের নামাযের পর কাজ শুরু করলে ওই সময়টায় আমি সবচেয়ে বেশি প্রোডাক্টিভ থাকতে পারি। অন্যসময়ে যে কাজ হয়তো আমার করতে ৪ ঘন্টা লাগছে, সেই একই কাজ করতে ফজরের পর আমার অর্ধেক সময় লাগে।

আমার কথায় বিশ্বাস করার দরকার নেই।

একই ধরণের কাজ আপনি অন্য যেকোনো সময়ে করুন আর ফজরের পরে করুন আর ট্র্যাক করুন। ফলাফল আপনিই বের করে নিতে পারবেন।

কুরআনে সূরা জুমু’আর ১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন –

And when the prayer has been concluded, disperse within the land and seek from the bounty of Allah , and remember Allah often that you may succeed.

রামাদানে অবশ্য একবারে সেহরি করে ঘুমাচ্ছি। রামাদানের পর আবার চেষ্টা করবো। আর যদি আপনার সময়-সুযোগ থাকে ফজরের নামাযের পর কিছু সময় আল-কোরআন পড়ে কাজ করতে পারেন। হোক সেটা মাত্র অল্প কয়েক লাইন। তবুও।

এই ভিডিওটি দেখতে পারেন – 

প্রোডাক্টিভ থাকার আরও ভালো ভালো উপায় আছে, বড় বড় মানুষ বইটইও লিখে গেছে এই সম্পর্কে।

নিজের প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে চাইলে সেগুলোও পড়ে দেখতে পারেন। এখানে কয়েকটা আর্টিকেলের লিঙ্ক দিয়ে দিচ্ছি, সময়-সুযোগমতো পড়ে নিয়েন। হয়তো প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে আপনাকে আরও হেল্প করবে।

প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে আপনি কি করেন? আর কোন কাজটাই মূলত আপনার প্রোডাক্টিভিটি নষ্ট করে?

জানান কমেন্টে।

পরবর্তী আপডেট পেতে ফেসবুকে প্রযুক্তিগিকের পেইজে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন।

Ariful Islam Palash
 

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। টুকটাক লেখালেখির পাশাপাশি বই পড়া, নতুন জিনিস জানার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে তার। ব্যবসার প্রতি মনের টান রয়েছে, ভবিষ্যতে দেশের অন্যতম একজন ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় নিজেকে। প্রয়োজনে ফেসবুকে পলাশ এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। :)