ওয়েব ২.০ – এক বোকা জাদুকর
ওয়েবসাইটের ব্যাকলিংক তৈরি করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ কন্টেক্সচুয়াল ব্যাকলিংক এর সোর্স ওয়েব ২.০। শত ওয়েব ২.০ সাইটের মধ্য থেকে পছন্দেরগুলোতে অ্যাকাউন্ট করে একাধিক আর্টিকেল পোস্ট করে সেখান থেকে নিজের সাইটে ব্যাকলিংক নেওয়া যায়। এই ব্যাকলিংকগুলো নেওয়া খুবই সহজ এবং এর উপর আপনার পুরো কন্ট্রোল থাকবে। কন্টেন্ট কেমন হবে, অ্যাঙ্কর টেক্সট কেমন হবে, আর্টিকেলের কোন অংশ থেকে লিংক নিবেন, সবকিছুই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
তাই অনেকেই এই ওয়েব ২.০র ব্যাকলিংককে কাজে লাগাতে চায় লিংক বিল্ডিং এর একটা সহজ উপায় হিসেবে।
আপনিও আপনার সাইটের জন্যে অনায়াসে ওয়েব ২.০ ব্যবহার করতে পারবেন। এই আর্টিকেলে ওয়েব ২.০ কিভাবে করা যেতে পারে, কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে এবং কোনগুলো খেয়াল না রাখলেও চলবে সেটা নিয়ে আলাপ করবো।
ওয়েব ২.০ নিয়ে অনেক ধরণের ভ্রান্ত ধারণাও আছে অনেকের মধ্যে। সেই বিষয়টাকেও আর্টিকেলের মধ্যে রাখবো।
কোন কোন ওয়েব ২.০ তে অ্যাকাউন্ট করবো?
ব্লগার, ওয়ার্ডপ্রেস, টাম্বলার, উইবলি এগুলো সচরাচর সবাই ব্যবহার করে। আপনিও করতে পারেন, সমস্যা নেই। তবে এগুলো ছাড়াও আরো অনেক সাইট আছে, যেখানে চাইলেই করা যায়। গুগলে ইংরেজিতে ডুফলো ওয়েব ২.০ সাইটস লিখে সার্চ করুন, অনেক ওয়েবসাইট থেকে অনেক লিস্ট পাবেন। সেখান থেকে আপনার পছন্দ অনুযায়ী ১০টার মতো সিলেক্ট করে নিন। কম-বেশিও করতে পারেন।
তবে খুব বেশি না করাটাই ভালো।
আপনার একাধিক সাইট থাকলে ভিন্ন ভিন্ন সাইট থেকে করতে পারেন। সবসময় নির্দিষ্ট এক সেট সাইট থেকে ব্যাকলিংক না নেয়াই ভালো।
কিভাবে ওয়েব ২.০ তৈরী করবো?
একটা ইমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে সবগুলোতে অ্যাকাউন্ট করে নিন। আমি জানি ইমেইল এড্রেস ব্যবহার নিয়ে কনফিউশন তৈরী হচ্ছে অনেকের মধ্যেই। সেটা দূর করা হবে।
অয়েব ২.০র নামে কিওয়ার্ডের অংশবিশেষ বা নিশের অংশবিশেষ দিতে পারেন। তবে ব্র্যান্ডেবল দেয়া ভালো। এইখান থেকে ডোমেইন নেইম আইডিয়া পেতে পারেন ওয়েব ২.০র জন্যে।
ওয়েব ২.০তে আপনার পছন্দ অনুযায়ী সুন্দর একটা থিম ব্যবহার করুন। মিনিমাল থিমগুলোই সাধারণত আমার কাছে ভালো লাগে। তাই সাদামাটা থিমই আমি ব্যবহার করি।
প্রতিটা ওয়েব ২.০ তেই কিছু বেসিক পেইজ তৈরী করে নিন – যেমনঃ কন্ট্যাক্ট, অ্যাবাউট আস ইত্যাদি। চাইলে প্রাইভেসি পলিসি পেইজও তৈরী করতে পারেন।
বেসিক পেইজ তৈরি হয়ে গেলে কন্টেন্ট রেডি করতে হবে। ওয়েব ২.০তে অন্তত ১টা ৩০০ শব্দ + আর্টিকেল দিয়ে আপনি আপনার সাইটে লিংক নিতে পারেন। তবে সম্ভব হলে অন্তত ৩টা আর্টিকেল পোস্ট করুন। সেখান থেকে ব্যাকলিংক নিন।
আমি ৩০০ শব্দ বলেছি, আপনি যদি ২৫০ দেন তাতেও হবে, ৫০০ দেন তাতেও হবে আর এর চাইতেও বেশি এগিয়ে ১০০০ দিতে চান তাতেও হবে। খুব ছোট বা খুব বড় না করে একটা স্ট্যাণ্ডার্ড মান রাখলেই চলবে । আর্টিকেল ১-৩টা দিন। মনে চাইলে আরও দিন। তাতেও সমস্যা নেই।
আর্টিকেল ইউনিক এবং রিডেবল হতে হবে। যদি বাজেট ঘাটতি থাকে স্পিনিং করা আর্টিকেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সুযোগ থাকলে অবশ্যই মাঝারি মানের চলার মতো আর্টিকেল হলেও লিখিয়ে নেয়া ভালো। আর যদি বাজেট না থাকে তেমন, স্পিনিং টুলও হাতে না থাকে সেক্ষেত্রে আর্টিকেল ডিরেক্টরি থেকে আর্টিকেল নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
তবে টাকা থাকলে এই কাজ করার কোন দরকার নেই, অযৌক্তিকও হয়।
বিষয়গুলো নিয়ে অভারথিংকিং করবেন না। অযথা নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ।
আর্টিকেলগুলোর সাথে প্রয়োজনীয় ছবি ব্যবহার করতে পারেন, ইউটিউব থেকে বা অন্য কোন ভিডিও শেয়ারিং সাইট থেকে (শুধু ইউটিউবই ক্যান সবসময়? 😛 ) ভিডিও এমবেড করে দিন।
দুই একটা অথোরিটি সাইটে লিংক দিতে পারেন।
জনগণ গণহারে উইকিপিডিয়াকেই লিংক দেয়। এটাকে খারাপ বলছিনা, তবে এর বাহিরেও তো বিষয়ভিত্তিক অথোরিটি সাইট আছে, তাদেরকেও লিংক দিন। কে যানে কখনো আপনারা অথোরিটি সাইটকে লিংক দিতে গেলে কিছু লিংক আমার সাইটেও এসে পড়বে। হাহা।
আরও কাজ করতে চাইলে ইনফোগ্রাফিক নিয়ে সেকশন করতে পারেন, সেখানে নিশ রিলেভেন্ট কিছু ইনফোগ্রাফিক আর সেই ইনফোগ্রাফিক সম্পর্কে ২-৪ লাইন লিখে দিতে পারেন। এতেও খুব ভালো হয়, ভ্যারিয়েশন আসলো।
অ্যাঙ্কর টেক্সট কি দিবো?
আমি জানি আমাদের খুব আবেগ। এই কারণেই মোশাররফ করিম ভাই বলেছেন “আমার এতো আবেগ ক্যারে”।
এই আবেগের তাড়নায় আমরা শুধু এক্স্যাক্ট ম্যাচ অ্যাঙ্কর টেক্সট ব্যবহার করতে চাই। ওয়েব ২.০ তো সাধারণ লিংক, এগুলোতে এক্স্যাক্ট ম্যাচ অ্যাংকর না দেয়াই ভালো। তারপরেও দিতে চাইলে খুবই কম সংখ্যায় নিতে হবে।
যেমন ধরলাম আপনি ১০টা ওয়েব ২.০ তৈরি করেছেন, সেগুলো থেকে আপনার একটা আর্টিকেলে ২০টা লিংক নিয়েছেন। এর মধ্যে ৫টা এক্স্যাক্ট ম্যাচ করুন, বাকি ১৫টা জেনেরিক অ্যাংকর করুন।
ভালো ভালো ব্যাকলিংক এর জন্যে এক্স্যাক্ট ম্যাচ অ্যাংকর রেখে দিন। অ্যাঙ্কর টেক্সট অভার-অপ্টিমাইজেশন সাইটের জন্যে পেনাল্টি নিয়ে আসবে। আবেগকে দমাতে হবে, যেভাবে আমাদের মোশাররফ করিম ভাই দমিয়েছেন। 😛
কতোগুলো লিংক নিবো?
একটা ওয়েব ২.০ তে ৩টা আর্টিকেল দিলে, প্রতিটা আর্টিকেল থেকে ১-২টি করে লিংক নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে একটা ওয়েব ২.০ থেকে টোটাল ৩-৬টি লিংক নিতে পারবেন। কম নিলে সমস্যা নেই। তবে এর চাইতে বেশি নেওয়াটা কেমন যেন হয়ে যায়।
আপনি আপনার সুবিধা অনুযায়ী নিয়ে নিতে পারেন।
এতিম ওয়েব ২.০ নিয়ে আমি কোথায় যাবো?
এই যে আপনি ওয়েব ২.০ গুলো তৈরি করলেন এগুলোর দিকে কোন ব্যাকলিংক নেই। বিশ্বে এই মুহুর্তে আপনি ছাড়া অন্য কেউ এগুলো সম্পর্কে জানেও না। এগুলো এতিম পেইজ। এগুলোকে জুসড আপ করতে হবে, যাতে করে ম্যাক্সিমাম লিংক জুস দিতে পারে আপনার সাইটে আর পাশাপাশি যেন ইন্ডেক্সও হয়ে যায়।
সোশাল বুকমার্কিং করতে পারেন, জিএসএ ব্লাস্ট করতে পারেন ওয়েব ২.০র দিকে, প্রোফাইল ব্যাকলিংক করতে পারেন, ব্লগ কমেন্টিং করতে পারেন। কারও হাতি মরা পিবিএন থাকলে সেগুলো থেকে ওয়েব ২.০ তে লিংক দিতে পারেন।
তবে এরকম লিংক সরাসরি মানি সাইটে দিবেন না।
এতে ওয়েব ২.০ গুলো জুসড আপ হবে, আপনার সাইটকে লিংক জুস পাস করবে।
একই ইমেইল ব্যবহার করলে গুগলতো ধরে ফেলবে?
আপনি যদি জিমেইল বাদে অন্য কোন ইমেইল সার্ভিস ব্যবহার করেন এবং সেগুলো ব্যবহার করে ওয়েব ২.০ একাউন্ট করেন, সেটা গুগল কিভাবে জানবে?
যুক্তি আসে, “আমি তো ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করি, আমার ব্রাউজার থেকে ডাটা নিয়ে যাবে”।
দুনিয়াতে কতো মানুষ ক্রোম ব্যবহার করে? সংখ্যাটা অনেক বড়। এতো মানুষের থেকে কালেক্ট করা ডাটার পরিমাণ কতো সেটা চিন্তা করা যায়? এতো কিছুর ভিড়ে আপনি কোন ইমেইল ব্যবহার করে কোন ওয়েব ২.০ তে একাউন্ট করলেন সেটা ট্র্যাক করা গুগলের মতো কোম্পানীর জন্যে সময় এবং মেধার অপচয়, দুইটিই।
তাও আপনার ভয় থাকলে ফায়ারফক্স বা অন্য ব্রাউজার ব্যবহার করুন। গুগল আপনার ব্যবহার করা ইমেইল এবং ওয়েব ২.০ কোনটাই জানবেনা।
আমার আইপি হাইড করতে হবে?
জ্বি না, আইপি হাইড করার জন্যে ভিপিএন/প্রক্সি ব্যবহারের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ, আপনি কোন ওয়েবসাইটে গিয়ে কোন ওয়েব ২.০ বানাচ্ছেন এবং সেখান থেকে লিংক নিচ্ছেন এগুলো ট্র্যাক করার উপায় নেই। আপনার আইপি গুগল জানবে, আপনি গুগলে কি সার্চ করছেন তা গুগল জানবে, কিন্তু আপনি গুগল ছাড়া অন্য কোন ওয়েবসাইটে কোন আইপি ব্যবহার করে গেলেন (গুগল সার্চ না করে) তা গুগলের জানার কোন সুযোগ নেই।
সুযোগ থাকে তখন যখন সেই সাইটে গুগল অ্যানালিটিক্স অ্যাড করা থাকবে।
আপনার ওয়েব ২.০তে আছে? নেই। আপনাকে ট্র্যাক করার কোন সুযোগ নেই এবং এইসব আজাইড়া কাজে আপনাকে ট্র্যাক করে সময় নষ্ট করার মতো অযথা রিসোর্সও গুগলেই নেই নিশ্চয়ই।
ভিপিএন লাগবে তখন যখন একই ওয়েব ২.০ সাইটে বার বার একাউন্ট করবেন (একাধিক নিশ সাইটের জন্যে) অল্প সময়ের ব্যবধানে। আপনি যদি আজকে একটা আর এক মাস পরে ওই সাইটেই আরেকটা অ্যাকাউন্ট করেন, তাতেও ভিপিএন লাগবেনা।
যারা সার্ভিস প্রোভাইড করে, তাদের ভিপিএন লাগে।
মূলত সার্ভিস প্রোভাইডারদের ব্যবহার করা টার্মের কারণেই মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে। তারা উল্লেখ করে দেয় যে প্রতিটা ওয়েব ২.০ তৈরির সময় ইউনিক আইপি/ভিপিএন ইউজ করা হয়েছে।
এটা কেন বলে জানেন? তাদের অনেক অ্যাকাউন্ট করতে হয়। একই আইপি থেকে একই ওয়েব ২.০ সাইটে অনেকগুলো অ্যাকাউন্ট করলে, ঐ ওয়েব ২.০ সাইট সবগুলো অ্যাকাউন্টকে ফ্ল্যাগ করে টার্মিনেট করে দিবে বা ব্যান করে দিবে।
এজন্যে বিষয়টা তাদের জন্যে জরুরি। আপনার জন্যে না।
তাই আপনার আইপি হাইড করারও প্রয়োজনীয়তা নেই।
যবনিকা
আর্টিকেল যেহেতু শেষ পর্যায়ে, এবার আসি টাইটেলের ব্যাপারে। বোকা জাদুকর - কেন বললাম...
ওয়েব ২.০ও বেশ শক্তিশালী একটা লিংক বিল্ডিং স্ট্র্যাটেজি হতে পারে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়। সাধারণত লিংক প্রোফাইল এবং অ্যাঙ্কর টেক্সট এ ডাইভারসিটি আনার জন্যে ব্যবহার করা হলেও সঠিকভাবে নারচার করলে এটা থেকেই বেশ ভালো আউটপুট আনা সম্ভব।
এক্সপায়ার্ড ওয়েব ২.০ নিয়ে পরবর্তী কোন এক আর্টিকেলে আলোচনা করবো।
ওয়েব ২.০ কিভাবে তৈরী করবেন, কেমন ভাবে রাখবেন, কেমন অ্যাঙ্কর টেক্সট নিবেন ইত্যাদি প্রশ্ন এবং কিছু বিভ্রান্তির সদুত্তর এই পোস্টে অলরেডি পেয়ে গেছেন। এবার আপনার যে বন্ধু এসইও করে বা করতে চায় এবং এই বিষয় নিয়ে তার ধারণা থাকা দরকার বলে মনে করেন তাদের সাথে শেয়ার করুন আর্টিকেল। ভালোবাসা ছড়িয়ে দিন।