আপনার ওয়াইফাই কানেকশনকে আরো সুরক্ষিত করুন

আধুনিক যুগ গতিশীল যুগ। একবিংশ শতাব্দীর এ পর্যায়ে এসে বেতারের ইন্টারনেটের চাহিদা ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে। গুগলের কল্যাণে স্মার্টফোন এখন সহজলভ্য হওয়ার কারণে প্রায় সবার হাতেই রয়েছে স্মার্টফোন। সে সুবাদে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এখন মোবাইল ডাটা অপেক্ষা ওয়াইফাই কানেকশন বেশী ব্যবহার করে থাকে। এখন অনেক জাভা মোবাইলেও ওয়াইফাই ব্যবহার করার ব্যবস্থা করে দেয়া হয় ওয়াইফাইয়ের এত বেশী প্রসারের কারণে।

আমরা বাঙ্গালী, যেখানেই ফ্রি পাই সেখানেই বসে যাই। আসলে ঠিক তা নয়, বিশ্বের প্রত্যেকটা দেশের মানুষেরই ফ্রি জিনিসের প্রতি কম-বেশী আগ্রহ রয়েছে। ফ্রি ওয়াইফাই জোন আপনি যে দেশেই করুন না কেন, সেখানে উপচে পড়া ভীড় জমবেই। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আপনার পার্সোনাল ওয়াইফাই কানেকশনও অন্য জন ব্যবহার করছে আপনাকে না জানিয়েই, বিষয়টা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কারণ পাসওয়ার্ড না জানলে আরেকজন কিভাবে আপনার ওয়াইফাই ব্যবহার করবে! এজন্য একটা কাহিনী বলি,
এক লোক তার ওয়াইফাইয়ের এসএসআইডি বা নাম দিয়েছিলো ‘Hack me if you can’। তার পরের দিন সে যখন নিজে তার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে গিয়েছিলো, তখন দেখলো তার নেটওয়ার্কের নাম ‘Challenge accepted’। 😀
আর তাছাড়া কারো কাছ থেকে আপনার ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড জানাটা কোনো দুরূহ কাজ না। 😛

অনেক কথা হলো, এবার কাজের কথায় আসি। আপনার ওয়াইফাইকে সুরক্ষিত করার জন্য পদ্ধতিগুলো নিয়ে আলোচনা করি।

পদ্ধতি এক:

প্রথমেই যেটা বলার সেটা হচ্ছে একটা ভালো পাসওয়ার্ড দেয়া। যা শুধু আপনিই জানবেন। ভালো এবং কঠিন পাসওয়ার্ড দেয়ার জন্য কিছু টিপস আপনি এখানে পাবেন – পাসওয়ার্ড নিয়ে কিছু কথা
পাসওয়ার্ড দেয়ার সময় যদি আপনি WPA/WPA2 এনক্রিপশন পদ্ধতি ব্যবহার করেন তাহলে খেয়াল করে অ্যালগরিদম অপশনটা TKIP + AES সিলেক্ট করে নিবেন। কিছু কিছু স্মার্টফোন AES অ্যালগরিদম সাপোর্ট করে না, সেক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার স্মার্টফোনে ওয়াইফাই ব্যবহার করতে চান তাহলে শুধু TKIP দিলেও চলবে।
যদি আপনি WEP এনক্রিপশন ব্যবহার তাহলে তেমন করে পাসওয়ার্ড দেয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। আর RADIUS হলেও তো তেমন কিছু করারই নেই ! 😛
বেশী ব্যাখ্যা না করে বলি যে RADIUS ১৯৯১ সালের প্রযুক্তি, WEP ১৯৯৯ সালের প্রযুক্তি যা পরবর্তীতে ২০০৪ সালে WPA দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। আর এটা বলা নিষ্প্রয়োজন যে নতুন প্রযুক্তি ভালো বেশী। আর এছাড়াও RADIUS আপনার স্মার্টফোনে সাপোর্ট করবে না। তাই আমার পরামর্শ WPA2 ব্যবহার করা।

পদ্ধতি দুই:

ওয়াইফাই কানেকশন যদি শুধুমাত্র নিজে বা নিজে যাদেরকে অ্যাক্সেস দিবেন এমন চিন্তা থাকলে সেটাও করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আপনার রাউটারের সেটিংসে কিছু পরিবর্তন করতে হবে। প্রত্যেকটা হার্ডওয়্যারের একটা নিজস্ব ম্যাক(MAC) আইডি থাকে, সেটা আপনার ডিভাইসের সেটিংসে গিয়ে দেখতে পারবেন। ম্যাক অ্যাড্রেস ৬ জোড়া একটি কোড, যা xx:xx:xx:xx:xx:xx বা xx-xx-xx-xx-xx-xx বা xxxxxxxxxxxx ভাবে সেটিংসে দেখানো হয়ে থাকে, তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই xx:xx:xx:xx:xx:xx এই ফরম্যাটে থাকে। ম্যাক অ্যাড্রেস বের করা নিয়ে অসুবিধায় থাকলে নিচে দেখুন।
আপনার ওয়াইফাইয়ের ওয়েব ইন্টারফেসে লগ-ইন করুন। লগ-ইন করার পর সিকিউরিটি সেকশনে বা ওয়্যারলেস সেকশনে যেয়ে ম্যাক ফিল্টার অপশনে যেয়ে সেখানে তাদের ম্যাক অ্যাড্রেস অ্যাড করে দিয়ে ফিল্টার এনাবল করে দিন। এরপর থেকে এখানে যাদের ম্যাক অ্যাড্রেস থাকবে শুধু তারাই ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে কানেক্ট করতে পারবে, কারো ম্যাক অ্যাড্রেস এই লিস্টে না থাকলে সে পাসওয়ার্ড জানলেও আপনার ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে সে কানেক্ট করতে পারবে না।
সতর্কতা:আপনার ডিভাইসের ম্যাক অ্যাড্রেস অ্যাড করতে ভুলবেন না। নয়তো আপনি ওয়েব ইন্টারফেসেও লগ-ইন করতে পারবেন না, আপনার কানেকশনের উপর আপনার সকল অধিকারও শেষ! 😛

উদাহরণস্বরূপ DD-WRT ফার্মওয়্যারে দ্বিতীয় পদ্ধতির ধাপগুলোর স্ক্রিনশট দেয়া হলো,

প্রথমে লগ-ইন করার পর Wireless → MAC Filter → Edit MAC Filter List

ধাপ ১, ২, ৩

ধাপ ১, ২, ৩

ম্যাক ফিল্টারের পেজ লোড হলে আপনার ডিভাইসসমূহের ম্যাক আইডি গুলো অ্যাড করুন। অ্যাড করার পর স্ক্রল ডাউন করে একেবারে শেষে যেয়ে Save বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ - ৪

ধাপ – ৪

তারপর Enable MAC Filter অপশনটি চেক করুন। তারপর Save এবং সবশেষে Apply Settings বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ - ৫, ৬, ৭

ধাপ – ৫, ৬, ৭

ইচ্ছা করলে এরপর আপনি ডিভাইস রিবুট করতে পারেন, দরকার নেই, তারপরও করলে ভালো।


:..
ম্যাক অ্যাড্রেস বের করুন
উইন্ডোজে
লিনাক্সে
ম্যাকে
অ্যান্ড্রয়েডে
আইফোন বা আইপ্যাডে
উইন্ডোজ ফোনে
..:


যদি উইন্ডোজ হয়, তাহলে ম্যাক আইডি দেখার জন্য Network Connections এ যেয়ে Local Area Connection-এ রাইট ক্লিক করে Status-এ ক্লিক করুন। তারপর Details-এ ক্লিক করে Physical Address খুঁজুন, যা থাকবে সেটাই আপনার ডিভাইসের এথারনেটের ম্যাক অ্যাড্রেস।
অন্যভাবে, আপনি কমান্ড প্রম্পট দিয়ে ম্যাক অ্যাড্রেস দেখতে পারবেন, তা করার জন্য আপনি কমান্ড প্রম্পট ওপেন করে কমান্ড দিন

getmac

বা

getmac /v /fo list

বা

ipconfig /all

 

রেজাল্টে Physical Address যেটা থাকবে সেটাই আপনার ম্যাক অ্যাড্রেস। ওয়াইফাই আর এথারনেটের জন্য আলাদা আলাদা হবে।
বাছাইকরণে ফেরত যান


লিনাক্স হলে, টার্মিনাল ওপেন করে কমান্ড দিন

$ ifconfig -a

রেজাল্টে আপনার হার্ডওয়্যারের পাশে HWaddr এর পরের কোডটাই ম্যাক অ্যাড্রেস। ওয়াইফাই আর এথারনেটের জন্য আলাদা আলাদা হবে।
বাছাইকরণে ফেরত যান


ওএস এক্স / ম্যাক হলে, System Preference-এ যেয়ে Network-এ ক্লিক করে Advanced বাটনে ক্লিক করুন। তারপর Hardware ট্যাবে যান। প্রথমেই লেখা থাকবে ম্যাক অ্যাড্রেস।
এছাড়া আপনার সকল হার্ডওয়্যারের ম্যাক অ্যাড্রেস দেখতে হলে টার্মিনাল ওপেন করে কমান্ড দিন

$ networksetup -listallhardwareports

রেজাল্টে আপনার সকল হার্ডওয়্যারের ম্যাক অ্যাড্রেস দেখাবে।
বাছাইকরণে ফেরত যান


অ্যান্ড্রয়েড হলে, সেটিংসে যান, ওয়াইফাই অপশনে যান, ওয়াইফাই চালু করেন, তারপর মেন্যু তে যান, ওয়াইফাইয়ের ম্যাক অ্যাড্রেস পাবেন।
বাছাইকরণে ফেরত যান


আইওএস / আইফোন বা আইপ্যাড হলে, সেটিংসে যেয়ে জেনারেলে ট্যাপ করুন, আপনার সকল হার্ডওয়্যারের ম্যাক অ্যাড্রেস পাবেন, ওয়াইফাই অপশনের পাশের টা আপনার ওয়াইফাইয়ের ম্যাক অ্যাড্রেস।
বাছাইকরণে ফেরত যান


উইন্ডোজ ফোন / লুমিয়া হলে, অ্যাপ লিস্ট থেকে সেটিংসে যান, তারপর About-এ ট্যাপ করুন, তারপর More Information-এ ট্যাপ করুন। সকল হার্ডওয়্যারের ম্যাক অ্যাড্রেস পাবেন, ওয়াইফাইয়ের টা আপনার ওয়াইফাইয়ের ম্যাক অ্যাড্রেস।
বাছাইকরণে ফেরত যান

আসাদুজ্জামান নূর
 

"আসাদুজ্জামান নূর" শব্দ দু'টোর আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় "কালের সিংহ মানে সময়ের বীর, আলো/ আলোপ্রাপ্ত/ আলোকিত বা আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াতের আলোয় আলোকিত"... জানি না আমি তেমন কিনা.. আশায় আছি, এক প্রানবন্ত ভবিষ্যতের.. ফেসবুকে, টুইটারে, গুগল প্লাসে আমি