ওয়াইফাই রাউটার -এ কাস্টম ফার্মওয়্যার

আপনি এই পোস্টটা পড়ছেন বলে ধরেই নিতে পারি আপনার একটা ওয়াইফাই রাউটার আছে। আচ্ছা, কখনো এটা ভেবে দেখেছেন কি আপনার ওয়াইফাই রাউটারটা কিভাবে কাজ করে? যদি ভেবে থাকেন তাহলে এই সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেন যে এটাতে নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিটার আছে, আর এটা নেটওয়ার্ক বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

কিন্তু আমার প্রশ্নটা কিন্তু ঠিক এইরকম ধাঁচের ছিলো না। আমার প্রশ্নটা ছিলো সফটওয়্যার ভিত্তিক। সফটওয়্যার ছাড়া হার্ডওয়্যার কোনো কাজ করতে পারে না। তাকে দেওয়া প্রত্যেকটা কমান্ড, যা অনুযায়ী সে কর্ম সম্পাদন করে সবই এক বা একাধিক সফটওয়্যার প্রদত্ত নির্দেশ। তাহলে রাউটারের ভিতরে কি দেয়া থাকে? একটা সাধারণ সফটওয়্যার?

নাহ, এটা মোটামুটি সাধারণ হলেও মোটেই সাধারণ নয়! 😀 আপনার রাউটারের ভিতরে যে সফটওয়্যার(!) দেয়া থাকে তা শুধু একটা সফটওয়্যার না, সেটা একটা লিনাক্স ফার্মওয়্যার। লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে বানানো হয়ে থাকে এসব ফার্মওয়্যার গুলো। আপনার যদি টিপি-লিংক রাউটার হয়ে থাকে আর এতোদিন ধরে ব্রাউজারের অ্যাড্রেসবারে 192.168.0.1 বা 192.168.1.0 বা tplinklogin.net লিখে যেই ইন্টারফেসে গিয়েছিলেন, সেটা আপনার রাউটারের ভিতরে সেট-আপ দেয়া লিনাক্স ফার্মওয়্যারের গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে আপনি কেন ফার্মওয়্যার ফ্ল্যাশ বা পরিবর্তন করবেন? এর পরিবর্তে আমি আপনাকে একটা পাল্টা প্রশ্ন করতে পারি, মানুষ অ্যান্ড্রয়েড রুট করে কেন? উত্তরটা খুবই সোজা, বেশী সুবিধার জন্য। কোম্পানীর দেওয়া স্টক রম বা ফার্মওয়্যারে অনেক কিছু দেওয়া থাকে না ডিভাইসকে সর্বোচ্চ টেকসই করে রাখার জন্য। কথায় আছে, “Great power comes with great responsibility.”

রাউটারে কাস্টম ফার্মওয়্যার ফ্ল্যাশ করলে অনেক বেশী কিছুতে অ্যাক্সেস পাবেন আপনি। কাস্টম ফার্মওয়্যারগুলোর মধ্যে dd-wrt, OpenWRT এবং Tomato বেশী প্রচলিত। তবে এর মধ্যে dd-wrt আর OpenWRT ভালো বেশী।
OpenWRT-তে আপনি অণেক বেশী সুবিধা পাবেন, সেইসাথে আপনার ডিভাইসকে ব্রিক করার সম্ভাবনাও রাখেন। আপনি লিনাক্স ব্যবহারকারী হলে বুঝতে সহজ হবে; OpenWRT-এ সবচেয়ে মজার জিনিস হচ্ছে প্যাকেজ ম্যানেজার। অর্থাৎ আপনি আপনার রাউটারে ইচ্ছামত সফটওয়্যারও ইনস্টল করতে পারবেন, আনইনস্টলও করতে পারবেন। আর OpenWRT অন্যান্য কাস্টম ফার্মওয়্যার থেকে বেশী আপডেটেড।
তবে ব্লিডিং এজ স্টেটে না থেকে সেফ জোনে থাকা ভালো। সে কারণে dd-wrt বেটার। এটাতে আপনি OpenWRT-এর মতো প্রায় সকল সুবিধাই পাবেন, কিছু ক্ষেত্রে বেশী পাবেন, যেগুলোর জন্য OpenWRT-তে আলাদা করে প্যাকেজ ইনস্টল করে নিতে হয়। তবে dd-wrt তে কোনো প্যাকেজ ম্যানেজার নেই, সে কারণে OpenWRT কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে।

dd-wrt বা OpenWRT যেটাই ইনস্টল করুন, আগে দেখে নিবেন ওদের ওয়েবসাইটে আপনার রাউটারের মডেল সাপোর্ট করে এমন কোনো ফার্মওয়্যার ভার্সন আছে কিনা। সাপোর্টেড ফার্মওয়্যার না হলে আপনার ডিভাইস ব্রিক হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
আপনার রাউটার dd-wrt কম্প্যাটিবল কিনা এবং ফার্মওয়্যার ডাউনলোড করার জন্য – For dd-wrt
আপনার রাউটার OpenWRT কম্প্যাটিবল কিনা এবং ফার্মওয়্যার ডাউনলোড করার জন্য – For OpenWRT

বকবক অনেক হলো, এবার কাজে,
প্রথমে আপনি পছন্দানুযায়ী কাস্টম ফার্মওয়্যারের ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার রাউটার সাপোর্টেড কিনা সেটা চেক করুন। সাপোর্টেড হলে ফার্মওয়্যার ডাউনলোড করুন। উদাহরনস্বরূপ, TP-Link TL-WR1043N রাউটারে dd-wrt ফার্মওয়্যারের জন্য, উপরে দেওয়া লিংকে যাওয়ার পর

তারপর আপনার রাউটারের ইন্টারফেসে লগ-ইন করুন, তারপর সিস্টেম টুলস-এ যেয়ে ফার্মওয়্যার আপগ্রেড ট্যাবে যান।

ব্রাউজ বাটনে ক্লিক করে আপনার ডাউনলোড করা .bin ফাইল লোকেট করুন। তারপর আপগ্রেড বাটনে চাপ দিন।
রাউটার রিবুট হবে, ফার্মওয়্যার আপগ্রেড হবে। তারপর ইচ্ছা করলে আপনি রাউটারের জন্য আলাদা ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড (ওয়াইফাই এর জন্য না কিন্তু, ফার্মওয়্যারের জন্য) দিতে পারেন। তারপর আপনার ইন্টারনেট কনফিগার করুন এবং এনজয় করুন নতুন ফার্মওয়্যারের সাথে রাউটারের উপর পুরোপুরি অ্যাক্সেস। :mrgreen:

সতর্কতা: ফার্মওয়্যার আপগ্রেডের সময় কোনোভাবেই রাউটারের পাওয়ার অফ করবেন না, তাহলে রাউটার ব্রিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিঃদ্রঃ – রাউটারের ফার্মওয়্যার নিজ দায়িত্বে আপগ্রেড করবেন, রাউটার ব্রিক হলে প্রযুক্তিগিকের উপর দায়ভার বর্তাবে না।

আসাদুজ্জামান নূর
 

"আসাদুজ্জামান নূর" শব্দ দু'টোর আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় "কালের সিংহ মানে সময়ের বীর, আলো/ আলোপ্রাপ্ত/ আলোকিত বা আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াতের আলোয় আলোকিত"... জানি না আমি তেমন কিনা.. আশায় আছি, এক প্রানবন্ত ভবিষ্যতের.. ফেসবুকে, টুইটারে, গুগল প্লাসে আমি